দমন পীড়ন চালিয়ে ইউপিডিএফ-কে তার আদর্শ, লক্ষ্য ও সংকল্প থেকে বিচ্যুত করা যাবে না : প্রসিত খীসা

0

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা তাঁর দলের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে উপলক্ষ করে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দমন পীড়ন চালিয়ে ইউপিডিএফ-কে তার আদর্শ, লক্ষ্য ও সংকল্প থেকে এক চুলও নড়ানো যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর মতো ভূমিকা পালন করতে চায়, তাদের পরিণতি কখনোই ভালো হবে না।’

আগামীকাল ২৬ ডিসেম্বর ইউপিডিএফের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার (২৫ ডিসেম্বর ২০১৭) দেয়া উক্ত বিবৃতিতে তিনি দলটির দেশে ও বিদেশে কর্মরত সকল স্তরের নেতা-কর্মী, প্রতিনিধি, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণকে উঞ্চ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

অধিকার আদায়ের আন্দোলন জোরদার করতে সবাইকে পার্টির পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একমাত্র আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায় করা সম্ভব।’

পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘দমবন্ধ করা ও ভয়াবহ’ উল্লেখ করে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, ‘দমন পীড়নে পিষ্ট হয়ে এখন জনগণের নাভিঃশ্বাস উঠছে। বেআইনী গ্রেফতার, খুন, নির্যাতন, হয়রানি, গ্রাম ঘেরাও, তল্লাশী, নারী নির্যাতন, ভূমি বেদখল প্রতিদিনকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক নিপীড়ন অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, পার্টি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোকে তাদের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কার্যক্রম চালাতে দেয়া হচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা সহজ প্রমোশনের আশায় ইউপিডিএফের নেতাকর্মীদের বিনা কারণে গ্রেফতার করে হাতে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে।’

পার্বত্য চট্টগ্রামে অঘোষিত সেনা শাসনে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং বলেন, ‘একটি বিশেষ মহল সম্প্রতি সমাজের দাগী আসামী, বখাটে ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে নব্য মুখোশ বাহিনী গঠন করে সন্ত্রাস, অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের মদদে ও ছত্রছায়ায় তারা অবাধে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। এই সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে আজ পর্যন্ত একজন ইউপিডিএফ সংগঠক ও অপর একজন সমর্থক প্রাণ হারিয়েছেন।’

প্রসিত খীসা অবিলম্বে এই নব্য মুখোশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচার এবং তাদের হাতে থাকা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানান।

নব্য মুখোশ বাহিনীকে লক্ষ্মীছড়িতে অধূনালুপ্ত সেনা-সৃষ্ট বোরকা পার্টির মতো একই পরিণতি ভোগ করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে, জেল জুলুম ও দমন পীড়ন চালিয়ে ইউপিডিএফ-কে তার আদর্শ, লক্ষ্য ও সংকল্প থেকে এক চুলও নড়ানো যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে না।’

তিনি নব্য মুখোশ বাহিনীর বিরুদ্ধে চলমান গণ প্রতিরোধ আরো জোরদার করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

ইউপিডিএফ নেতা দালাল, সুবিধাবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর মতো জাতীয় স্বার্থ বিরোধী পঞ্চম বাহিনীর ভূমিকা পালন করতে চায়, তাদের পরিণতি কখানোই ভালো হবে না। স্বাধীনতার ৪০-৪৫ বছর পর গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ তথা প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের দোসর রাজাকার আলবদরদের বিচার ও ফাঁসি হচ্ছে; সময় থাকতে সংশোধন না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের “রাজাকার” ও সেনা দোসরদেরও একদিন একই পরিণতি ঘটবে।’

প্রসিত খীসা জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জনগণের সংগঠিত শক্তির কাছে সকল অপশক্তি পরাজিত হতে বাধ্য।’

প্রসিত খীসা দেশের বর্তমান ‘শ্বাসরুদ্ধকর’ পরিস্থিতির জন্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেন এবং বলেন, ‘দেশে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনে মানুষের নিরাপত্তাহীনতা আজ চরমে পৌঁছেছে। গুম ও অপহরণের ভয়ে সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবার দাম বৃদ্ধির কারণে শ্রমিক, কৃষক ও মধ্যবিত্তসহ সাধারণ জনগণের জীবন যাপন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামত উপেক্ষ করে সুন্দরবনের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের উপর দলীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে মুষ্ঠিমেয় কিছু ব্যক্তিকে জনগণের সম্পদ লুট ও দুর্নীতি করে অন্য দেশে টাকা পাচার করে দ্বিতীয় নিবাস গড়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ’

তিনি এই সংকটময় অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দেশের সকল প্রগতিশীল, প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

এদিকে, ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে পার্টির সকল ইউনিটে বাস্তব পরিস্থিতি অনুসারে র‌্যালি, সমাবেশ, মত বিনিময় সভা, চা চক্র ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে ইউপিডিএফ’র প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। উক্ত কর্মসুচি সফল করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
—————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More