পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টিকারীরা চিহ্নিত: সরকার ব্যবস্থা নেবে কি?

0

।। মন্তব্য প্রতিবেদন।।
নব্য মুখোশ বাহিনীর প্রধান, কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও বহুল আলোচিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে অপহরণকারী তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা এবং সন্ত্রাসীদের গডফাদার শক্তিমান চাকমা নিহত হওয়ার পর পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এস. এম. মনির-উজ-জামান নানিয়াচরে গিয়ে বলেছিলেন, ‘পাহাড়ের জনসাধারণকে যারা শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না, আমরা তাদেরকেও শান্তিতে থাকতে দেবো না।’ তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আর এক ফোঁটা রক্ত ঝরলে তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করা হবে। তার এই ৪-মের হুঁশিয়ারী বাস্তবে রূপায়িত হয় কীনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সন্ত্রাসী বর্মা নিহত হওয়ার ২৩ দিন পর আবার রক্তাক্ত হলো পাহাড়। গত ২৮ মে রাঙামাটির সাজেকের দক্ষিণ করল্যাছড়িতে একটি বিশেষ বাহিনীর সহায়তায় জেএসএস সংস্কারবাদী ও নব্য মুখোশ বাহিনীর সদস্যদের ব্রাশ ফায়ারে খুন হলেন ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী গণসংগঠনের তিন নেতা। এরা হলেন ইউপিডিএফ সংগঠক স্মৃতি চাকমা(৫০), গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা সঞ্জীব চাকমা (৩০), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক নেতা অটল চাকমা (৩০)।

এই ঘটনার পর ডিআইজি অকুস্থলে যাননি এবং কোন বক্তব্যও দেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তার পদধূলিও পড়েনি সেখানে। সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের — যিনি শক্তিমান চাকমা নিহত হওয়ার পর চোখের পানি ফেলেছিলেন– আজ তিনিও নীরব। কিন্তু কেন?

যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাবলীর দিকে খেয়াল রাখছেন তাদের কাছে সহজেই প্রতীয়মান হবে যে, সাম্প্রতিক হত্যাকা-গুলোর একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্য ভাগ থেকে প্রায় আড়াই বছর ধরে পাহাড়ে সংঘাত বন্ধ ছিল। এ সময় জনগণের মধ্যে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু গত বছর ১৫ নভেম্বর একটি বিশেষ বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তা ও সংস্কারবাদী চার নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় নব্য মুখোশ বাহিনী নামে একটি দুর্বৃত্ত বাহিনী মাঠে নামিয়ে দেয়া হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যায়। প্রথম আলোর ২৯ মের এক প্রতিবেদনেও একই মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে: ‘মূলত ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক (অর্থাৎ নব্য মুখোশ বাহিনী) গঠনের পর পাহাড় আবার অশান্ত হয়ে ওঠে।’ গৌতম দেওয়ান মনে করেন, ‘খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ শক্তিশালী। সেখানে তাদের মধ্য থেকে বের হয়ে আসা দলটির এত শক্তির উৎস রহস্যাবৃত। আসলে পাহাড়ে শান্তি আসুক, কোনো কোনো মহল তা চায় না।’ (নতুন দল গঠনের পরই রক্ত ঝরছে পাহাড়ে, প্রথম আলো ২৯ মে ২০১৮)।

এই নব্য মুখোশ দুর্বৃত্তরা নানিয়াচর জোনের পাশের গ্রামে আস্তানা গেড়ে বিনা কারণে একের পর এক ইউপিডিএফ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হত্যা করে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হুমকি দিয়ে ঘরছাড়া করে এবং দেশব্যাপী আলোচিত দুই এইচডব্লিউএফ নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাসহ অনেক নিরীহ লোকজনকে ইউপিডিএফ সমর্থক সন্দেহে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করে। এই নব্য মুখোশদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মিটিং মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। কিন্তু সরকার সন্ত্রাস বন্ধে এবং সন্ত্রাসীদের গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কিছুই করেনি। স্থানীয় প্রশাসনও ছিল সম্পূর্ণ নীরব, যেন নব্য মুখোশদের এইসব হত্যাযজ্ঞে ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

নব্য মুখোশদের পাশাপাশি সংস্কারবাদীরাও নিজেরা হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা জানুয়ারি থেকে ৩-৪ মাসের মধ্যে ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমাসহ ৫ জনকে খুন করে। এইসব খুন ছিল পরিকল্পিত এবং ঠাণ্ডা মাথায় করা। এই সব হত্যাকাণ্ডের পূর্বে ইউপিডিএফের তরফ থেকে কোন প্রকার উস্কানি ছিল না। বরং উল্টোটাই ছিল — সংস্কারবাদীরাই বার বার সমঝোতা লঙ্ঘন করে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছিল।

কাজেই এটা অত্যন্ত পরিস্কার কারা পাহাড়ে বর্তমান সংঘাত, রক্তপাত ও অশান্তির জন্য দায়ি। তবে মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রশ্ন হলো সরকার বা প্রশাসন কি এদের বিরুদ্ধে আদৌ ব্যবস্থা নেবে? যদি আজ ব্যবস্থা নেয়, তাহলে কাল থেকেই পাহাড়ে রক্তপাত বন্ধ হতে বাধ্য।

কিন্তু সরকারের আচরণে আমরা উল্টোটাই দেখতে পাচ্ছি। আসল সন্ত্রাসী ও অশান্তি সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার না করে চট্টগ্রাম শহর থেকে গভীর রাতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতাদের গ্রেফতার করে শক্তিমান চাকমা হত্যা মামলায় তাদের নামও গেঁথে দেয়া হচ্ছে, অথচ শক্তিমান চাকমাকে তারা জীবনেও কোনদিন দেখেছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এই যদি হয় সরকারের নীতি, তাহলে পাহাড়ে কিভাবে শান্তি আসবে?
—————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More