বাংলাদেশের শিক্ষানীতি এবং সংখ্যালঘু জাতিসমূহের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকার প্রসঙ্গে

0

[বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যৌথ উদ্যোগে গত শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর মুসলিম হল ইনস্টিটিউটে “সংখ্যালঘু জাতিসমূহের শিক্ষা ও মাতৃভাষা” শীর্ষক আলোচনা সভায় এই প্রবন্ধটি পাঠ করা হয়। প্রবন্ধটির গুরুত্ব বিবেচনা করে হুবহু এখানে প্রকাশ করা হলো– সম্পাদক মণ্ডলী]

 “The only way for a people to grow, for their children to learn, is through their own language.”

  • Jawaharlal Nehru, Glimpses of World History, p. 23, Eleventh edition 1996, Jawaharlal Nehru Memorial Fund/Oxford University Press.

১। ভূমিকা
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাতৃভাষাকে মায়ের দুধের সাথে তুলনা করেছেন। শিশুর জীবন ধারণ ও বৃদ্ধির জন্য যেমন মায়ের দুধ অপরিহার্য, তেমনি তার নৈতিক, মানসিক ও আত্মিক বিকাশের জন্য মাতৃভাষার কোন বিকল্প থাকতে পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতির শিশুরা আজ এই মাতৃদুগ্ধ-রূপ মাতৃভাষা থেকে বঞ্চিত। তাদের ‘মাতৃ’ যেমন অধিকারহীন, নিপীড়িত, শোষিত ও লাঞ্ছিত, তাদের ভাষাও তেমনি অবহেলিত, অনাদৃত ও নিষ্পেষিত। যে দেশের জনগণ পৃথিবীর বুকে মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন, জীবন উৎসর্গ করেছেন, সে দেশে সংখ্যালঘু জাতির ভাষাগুলোর প্রতি এই রাষ্ট্রীয় বৈষম্য অত্যন্ত দুঃখজনক।

২। স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষা সংস্কার
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশকে ‘এক জাতি এক রাষ্ট্র’ ইউরোপীয় রাষ্ট্র গঠনের এই মডেল অনুসরণ করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলো যেমন রাষ্ট্র গঠনের পর দেখতে পায় তাদের প্রত্যেক রাষ্ট্রের ভৌগলিক সীমানার মধ্যে মূল জাতি ছাড়াও এক বা একাধিক অন্য জাতি পূর্ব থেকেই বর্তমান, বাংলাদেশেও নতুন রাষ্ট্র গঠনের প্রাক্কালে দেখা যায় এখানে বাঙালি ছাড়াও বহু সংখ্যালঘু জাতির বসবাস রয়েছে (আনুমানিক ৪৫টি)। এক-জাতি ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণে দেশের শাসকগোষ্ঠীর জন্য এই সংখ্যালঘু জাতিগুলো বাধা বা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, আর সেই সমস্যা দূর করতে তারা যে নীতির আশ্রয় নেয় তা হলো assimilation (মূল জাতির সাথে আত্মীকরণ বা একীভূতকরণ) বা তাদেরকে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর রাষ্ট্রের এই নীতি এখানে বলবৎ রয়েছে। সে কারণে ইউরোপের উন্নত দেশগুলো তাদের সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে জাতি সমস্যার মোটামুটিভাবে সমাধান করতে সক্ষম হলেও, বাংলাদেশে এই সমস্যা এখনো পূর্ণ মাত্রায় বিরাজমান।

রাষ্ট্রের এই assimilation নীতি বাস্তবায়নের বা ও সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার একটি প্রধান হাতিয়ার হলো শিক্ষা। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য বহু কমিশন গঠিত ও শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। যেমন ড. কুদরত-ই-খুদা কমিশন( ১৯৭৪), কাজী জাফর-আব্দুল বাতেন প্রণীত অন্তবর্তীকালীন শিক্ষানীতি (১৯৭৯), মজিদ খান কমিশন (১৯৮৩), মফিজ উদ্দিন কমিশন (১৯৮৭), জাতীয় শিক্ষানীতি (২০০০), মনিরুজ্জামান মিয়া জাতীয় শিক্ষা কমিশন (২০০৩) এবং জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০।

শেষোক্ত জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ ছাড়া বাকি কমিশনগুলোর রিপোর্টে কিংবা অন্যান্য প্রণীত নীতিমালায় ও সুপারিশে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। রাষ্ট্রীয় নীতি অনুসরণ করে যে পাঠ্যক্রম প্রণীত হয় সেখানে একজন সংখ্যালঘু জাতির শিক্ষার্থী তার নিজের জাতির, সংস্কৃতির ও পরিবেশের কোন পরিচয় লাভ করে না। সে যে ভাষায় প্রণীত পাঠ্যপুস্তক পড়তে বাধ্য হয় সে ভাষা তার অপরিচিত, যে ভাষার মাধ্যমে তাকে পাঠদান করা হয় সে ভাষাও তার অবোধ্য। এছাড়া পাঠ্যের বিষয়বস্তুর সাথেও তার অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠা সহজসাধ্য হয় না। ফলে প্রথমত ভাষার কারণে এবং দ্বিতীয়ত পঠিত বিষয়ের সাথে তার আন্তরিক যোগাযোগ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে সে শিক্ষায় আনন্দ পায় না এবং এক সময় শিশুকালেই শিক্ষাক্রম থেকে ঝরে পড়ে। অপরদিকে যারা কোনভাবে মানিয়ে নিয়ে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়, তারাও হয়ে ওঠে এমন শিক্ষিত যার কাছে নিজ মাতৃভাষা যেন এক অপরিচিত বস্তু, যার নিজ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে কোন পরিচয় থাকে না। এক কথায় দীর্ঘ শিক্ষা গ্রহণের পরও সে আত্ম-চেতনা-বিহীন এক অপূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।

ctg,3.09.16

৩। কেন মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা
কেন মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রয়োজন তা উপরের আলোচনা থেকে সহজেই বোঝা যাবে। তবে বাংলাদেশে নিম্লিলিখিত আরও কয়েকটি কারণে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা জরুরী।

ক. বাংলাদেশে বাংলা ছাড়া আরও ৪৫টির মতো ভাষা রয়েছে। এ ভাষাগুলোর সংরক্ষণ ও বিকাশ ঘটানো।

খ. শিশুর সার্বিক বিকাশ সাধন।

গ. পাঠ্যক্রম/স্কুল থেকে সংখ্যালঘু জাতির শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করা। ইউনেস্কোর এক রিপোর্টে বলা হয়ছে: “Globally, there are 50-75 million ‘marginalized’ children who are not enrolled in school. Children whose primary language is not the language of instruction in school are more likely to drop out of school or fail in early grades. Research has shown that children’s first language is the optimal language or literacy and learning throughout primary school.[]   অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছে পৃথিবীর বহু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কেবল একটি বা কখনো কখনো কয়েকটি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ভাষাকে ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়। এর অর্থ হলো “excluding other languages and with them the children who speak them.”[]

ঘ. শিক্ষার পূর্ণতা অর্জন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন “কোন শিক্ষাকে স্থায়ী করিতে চাইলে, গভীর করিতে চাইলে, ব্যাপক করিতে হইলে তাহাকে চিরপরিচিত মাতৃভাষায় বিগলিত করিয়া দিতে হয়।”

ঙ. অন্য ভাষা শিক্ষা সহজতর করা। আমরা প্রত্যেকে নিজের ভাষার মাধ্যমেই অন্য ভাষা শিক্ষা করে থাকি।

চ. জাতির বিকাশের জন্য। একটি জাতির প্রধান পরিচয় হলো তার ভাষা। জাতি যতি বেশী উন্নত, সে জাতির ভাষাও তত বেশী সমৃদ্ধ।

ছ. নিজস্ব সংস্কৃতির রক্ষা ও বিকাশ সাধন। ভাষা হলো সংস্কৃতির বাহন। সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি রক্ষা করতে হলে অবশ্যই তার ভাষাকে রক্ষা ও সমৃদ্ধ করতে হবে।

৪। আন্দোলন ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
এ প্রসঙ্গে প্রাইমারী পর্যন্ত সংখ্যালঘু জাতির স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা চালুসহ শিক্ষা সংক্রান্ত পাঁচ দফা দাবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আন্দোলন সম্পর্কে এখানে সংক্ষেপে আলোকপাত করা প্রয়োজন। ২০০১ সালে এই আন্দোলন শুরুর পর আজ পর্যন্ত বহু মিছিল সমাবেশ, স্মারকলিপি পেশ, ছাত্র ধর্মঘট, ক্লাশ বয়কট, সংখ্যালঘু জাতির মাতৃভাষায় প্রতীকী ক্লাশ অনুষ্ঠান, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে অংশগ্রহণ থেকে বিরতি ইত্যাদি কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। ২০০৩ সালে স্মারকলিপি পেশ করা হলে, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে চিঠি দেয়া হয়। ২০১১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র ধর্মঘট পালনের দিন বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পিসিপির দাবির যৌক্তিকতা মেনে নেন এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৩ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় প্রাথমিকভাবে পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতির ৬টি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হবে। কিন্তু এসব ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি কেবল কথার কথাই থেকে যায়। সর্বশেষ এ বছর শিক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন আগামী ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মনিপুরী ও গারো ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে।

৫। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অ-বাঙালি ভাষার প্রতি সরকারী নীতি ও পদক্ষেপ
এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক দেয়া এই স্বীকৃতির ফলে আজ “২১শে ফেব্রুয়ারি সকল ভাষায় কথা কয়।” [প্রয়াত বিচারপতি হাবিবুর রহমান] ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “মহান একুশে ফেব্রুয়ারির সেই রক্ত স্রোত গৌরবের সুর বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়। … আজ বিশ্বের সকল জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। … বিশ্বের সকল ভাষা সংরক্ষণের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি।”[]

ইউনেস্কোর স্বীকৃতির সাথে দেশের সংখ্যালঘু জাতির ভাষাগুলোর প্রতি যে দায়িত্বও বর্তেছে তা অনেকে স্বীকার করেন। সাবেক বিচারপতি হাবিবুর রহমান লেখেন, “একুশের ষাট বছরে আমাদের ভাষা দৈন্যমোচনে আমাদের যে কর্তব্য শুধু যে তা পালন করতে হবে তাই নয়, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর আমাদের ওপর আর একটা বাড়তি দায়িত্ব পড়েছে সকল ভাষার উন্নতিকল্পে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ঘরে বদান্যতা প্রদর্শন করে আমাদের দেশে যে অ-বাংলা ভাষা রয়েছে তা সংরক্ষণ ও প্রসারণের জন্য বিশেষভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।”[]

তা সত্বেও ১৯৯৯ থেকে ২০১৬ গত ১৮ বছরে সরকার অ-বাংলা ভাষাগুলোর জন্য এখনো গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সংখ্যালঘু ভাষা প্রশ্নে সরকারী নীতি ও কর্মসূচী এখনো কাগজেপত্রে ও প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এটা ঠিক ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষা নীতিতে “প্রাথমিক স্তরে আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জন্য স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করার” কথা বলা হয়েছে। এই শিক্ষা নীতির প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধ্যায়ে ‘আদিবাসী শিশু’দের শিক্ষার ব্যাপারে ৩টি অনুচ্ছেদ বরাদ্দ করা হয়েছে। এগুলো হলো:

১৮. আদিবাসী শিশুরা যাতে নিজেদের ভাষা শিখতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য আদিবাসী শিক্ষক ও পাঠ্যপুস্তকের ব্যবস্থা করা হবে। এই কাজে, বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে, আদিবাসী সমাজকে সম্পৃক্ত করা হবে।

১৯. আদিবাসী প্রান্তিক শিশুদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

২০. আদিবাসী অধ্যুষিত (পাহাড় কিংবা সমতল) যেসকল প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেসকল এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। যেহেতু কোনো কোনো এলাকায় আদিবাসীদের বসতি হালকা তাই একটি বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আবাসিক ব্যবস্থার প্রয়োজন হলে সেদিকেও নজর দেয়া হবে।[]

৬। সংখ্যালঘু জাতির মাতৃভাষার অধিকার
নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা একটি প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। আন্তর্জাতিক আইনে ও ঘোষণাপত্রে এই অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। Indigenous and Tribal Populations Convention, 1957-এর ২৩(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:

Children belonging to the populations concerned shall be taught to read and write in their mother tongue or, where this is not practicable, in the language most commonly used by the group to which they belong.

International Covenant on Civil and Political Rights এর ২৭ ধারায় বলা হয়েছে:

In those States in which ethnic, religious or linguistic minorities exist, persons belonging to such minorities shall not be denied the right, in community with the other members of their group, to enjoy their own culture, to profess and practise their own religion, or to use their own language.

সর্বশেষ United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples[] –এর ১৭(১) অনুচ্ছেদে ঘোষণা করা হয়েছে:

Indigenous peoples have the right to establish and control their educational systems and institutions providing education in their own languages, in a manner appropriate to their cultural methods of teaching and learning.

এছাড়া উপরোল্লেখিত দলিলগুলোসহ আরো বহু আন্তর্জাতিক আইনে প্রত্যেক জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার বলতে তার ভাষার অধিকারও বোঝানো হয়। ইংল্যা-, পর্তুগাল, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, স্পেনসহ বিশে^র উন্নত দেশগুলোতে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর জন্য স্বায়ত্তশাসনসহ ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘু জাতির নিজস্ব স্বায়ত্তশাসিত এলাকায় তাদের মাতৃভাষাকে সরকারী ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এমনকি এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ ফিলিপাইনেও সংখ্যালঘুদের নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা চালু করার জন্য সংসদে বিল পাস করা হয়েছে। ফিলিপাইনে ১৭১টি ভাষা রয়েছে,যার মধ্যে ইংরেজী ও ফিলিফিনো (Tagalog) সংবিধানে সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।[]

সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ায় ছোট বড় প্রত্যেক জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও ভাষার অধিকার স্বীকার করা হয়েছিল। কোন একটি জাতির ও ভাষার জন্য বিশেষ অধিকার বা সুবিধা নয় –– এই ছিল লেলিনবাদী নীতি। The working class and the national question প্রবন্ধে তিনি লেখেন:

“For different nations to live together in peace and freedom or to separate and form different states (if that is more convenient for them), a full democracy, upheld by the working class, is essential. No privileges for any nation or any one language! Not even the slightest degree of oppression or the slightest injustice in respect of a national minority – such are the principles of working-class democracy.”[]

৭। উপসংহার
বহু আন্দোলন সংগ্রামের পর আজ সরকারসহ সকল সচেতন মহলে স্বীকার করা হয় যে, দেশে অ-বাঙালি সংখ্যালঘু জাতির ভাষাগুলোর সংরক্ষণ ও বিকাশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বাংলাদেশে বাংলা লিংগুয়া ফ্রাংকা বা সর্বজনীন ভাষা। অর্থনৈতিক প্রয়োজনে, পারস্পরিক যোগাযোগ ও আদান-প্রদানের প্রয়োজনে দেশের অন্য-ভাষীরা এই ভাষা শিখতে বাধ্য। তাদের কাছে বাংলা শিক্ষা অধিকতর সহজ হবে যদি তা নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে হয়ে থাকে। সে জন্য কাল বিলম্ব না করে সংখ্যালঘু জাতির মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা জরুরী। এছাড়া অ-বাঙালি সংখ্যালঘু জাতির ভাষাগুলো সম্পর্কে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এজন্য ‘সংখ্যালঘু-জাতি ভাষা ইনস্টিটিউট’ বা National Minority Language Institute বা অন্য যে কোনো নামে একটি প্রতিষ্ঠান করা যেতে পারে।

পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিনামা
১.পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
২.জাতিসত্তার প্রতি অবমাননাকর যেকোন বক্তব্য পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিতে হবে।
৩.পাহাড়ি জাতিসত্তার সঠিক ও সংগ্রামী রাজনৈতিক ইতিহাস সম্বলিত পুস্তক পার্বত্য চট্টগ্রামের স্কুল ও করেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪.বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তার সংক্ষিপ্ত সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতিমূলক পুস্তক বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
৫.পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়ি কোটা চালু করতে হবে।
——————————–
১. http://www.globalpartnership.org/blog/children-learn-better-their-mother-tongue
২. http://www.globalpartnership.org/blog/children-learn-better-their-mother-tongu
৩. শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৪ স্মরণিকা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

৪. বাংলা ভাষার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে,  http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/4700
৫. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃ. ৭

৬. বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র অনুমোদন না করলেও এবং বাংলাদেশে আদিবাসী নেই বলে প্রচার করলেও এক দৃষ্টিতে দেখলে সরকার সংবিধানে আদিবাসী স্বীকৃতি দিয়েছে। সংবিধানের ২৩ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা করবেন।’ আন্তর্জাতিক আইনে বা ঘোষণাপত্রে আদিবাসীর সংজ্ঞা দেয়া হয়নি, তবে আদিবাসী বলতে ‘উপজাতি’ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, জাতিসত্তা ইত্যাদিকে বোঝানো হয়ে থাকে। সেই দিক থেকে দেখলে বাংলাদেশ সংবিধানে আদিবাসী স্বীকৃতি মিলেছে।
৭. Mother Tongue Based Education in the Philippines by Laura Garbes, https://www.culturalsurvival.org/news/mother-tongue-based-education-philippines
৮. V. I. Lenin, Collected Works, Volume 19, Foreign Language Publishing House, Moscow 1962, page 92

আরও পড়ুন:
>>মৌলিক অধিকারের ভিত্তিতে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষা চালু করতে হবে

—————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More