লংগদুতে পাহাড়িদের ৩ শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে হত্যা
রাঙামাটি : রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘লংগদুবাসীর ব্যানারে’ সেটলারদের একটি মিছিল থেকে পাহাড়িদের কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও ৭০ বছরের এক বৃদ্ধাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ঘটনার বিবরণে আরো জানা যায়, গতকাল ১জুন ২০১৭ রাত ৯ টার সময় সেনাবাহিনীর লংগদু জোনের অফিসার রফিক এবং লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লংগদু ইউপি চেয়ারম্যান কলিন মিত্র চাকমার বাড়িতে যান এবং সেখানে তাঁর সাথে বৈঠক করেন। মিটিঙে জেএসএস নেতা মনিশংকর, আতারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঙ্গল কুমার উপস্থিত ছিলেন। মিটিঙে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ওয়ারেন্ট অফিসার রফিক পাহাড়িদের চিন্তা করার কোনো কারণ নেই বলে আশ্বাস প্রদান করেন। মিটিঙে উপস্থিত আওয়ামীলীগের সভাপতি বারেক সরকারও কুলিন মিত্রকে নিশ্চয়তা দিয়ে তারপরদিন অর্থাৎ আজ শুক্রবার সকালে সমাবেশের সময় যেন পাহাড়িরা ঘর থেকে বের না হয় এই অনুরোধ করেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে তিনি চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র চাকমাকে আশ্বাস প্রদান করেন।
আজ শুক্রবার সকালে লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ মটর সাইকেল ড্রাইভারের মৃত্যুর প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয়। ‘লংগদুবাসীর ব্যানারে’ তারা মিছিল ও সমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে নৌপথে শত শত সেটলার বাঙালিকে জড়ো করে। জানা গেছে, উত্তেজিত জনতার মিছিল ও সমাবেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসন সক্রিয় কোনো ভূমিকা পালন করেনি। এই মিছিল ও সমাবেশ থেকেই মুলত পাহাড়িদের বাড়িঘরে ভাঙচুর-হামলা-লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতেই পাহাড়ি দোকানঘর ও গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে বলে স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেছেন।
সকালের দিকে লংগদু সদরে পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকায় হামলা হবার ঘন্টাখানেকের মধ্যে সকাল ১১.৩০টা-১২.০টার দিকে প্রশাসন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা না মেনে সেটলাররা লংগদু সদর উপজেলার উত্তর দিকে বাত্যা পাড়া গ্রাম ও পশ্চিম দিকে মানিকবি ছড়া গ্রামে হামলা চালাতে যায়। এ সময় এলাকার পাহাড়ি জনগণ সেটলার বাঙালিদের হাত থেকে গ্রাম বাঁচাতে প্রতিরোধ করতে চাইলে সেনাবাহিনীর একটি দল পাহাড়িদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাড়া করে। পাহাড়িরা সেনাবাহিনীর অস্ত্রের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেলে সেটলার বাঙালিরা সংঘবদ্ধ হয়ে উক্ত গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ির মূল্যবাদনজিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়।
সেটলারদের হামলা বিষয়ে লংগদু সদর নিবাসী একজন পাহাড়ি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা গতকাল বিকাল থেকেই আশংকায় দিন কাটালেও আমরা আশা করিনি যে সেটলাররা আমাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেবে ও আমাদের ঘরে লুটপাট চালাবে।
লংগদু সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, লংগদু তিনটিলা গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধা জুনুবালা চাকমা নামে একজনকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। এছাড়া বড়আদাম ও মা’জন পাড়ায় সেটলাররা আক্রমণ করেছে বলে তিনি জেনেছেন। তবে তিনিও সেটলার আক্রমণের ভয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ায় এখনো এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি।
বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পাহাড়িরা প্রাণের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।