অস্ট্রেলিয়ার সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে এক সিনেটরের বক্তব্য

0

[গত বছর (২০১৭) ১৩ জুন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের সিনেটর লি রিয়ানন (Lee Rhiannon) সে দেশের সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে এক জোরালো বক্তব্য দেন। নিচে আমরা তার সেই বক্তব্য অনুবাদ করে পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি:]

অন্য একটি প্রসঙ্গে বলতে চাইছি – আজ আমি অস্ট্রেলিয়ায় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস ইন্ডিজিনাস জুম্ম এসোসিয়েশনের সদস্য ও সমর্থকদের সাথে যোগ দিয়েছি। তারা তাদের স্বজাতির জনগণের ওপর বর্বর আচরণের প্রতিবাদে ও ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আমাদের সংসদে একসাথে জড়ো হয়েছিলেন। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম বহু বছর ধরে গণহত্যা ও জাতি নিধনের শিকার হয়েছে। ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে জলাধার নির্মাণ ও জলবিদ্যুত প্রকল্পের জন্য হাজার হাজার মানুষকে তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়, এই অবস্থা আরো খারাপ হয় যখন জুম্ম জনগণের উপর চালানো হয় গণহত্যা – জুম্ম হলো ঐ এলাকার আদিবাসী জনগণের সমষ্টিগত নাম।

বাংলাদেশী (বাঙালি) বসতিস্থাপনকারীরা ও সেনাবাহিনী উভয়েই (জুম্ম জনগণের উপর) নিয়মিত সহিংসতা, বিশেষত যৌন সহিংসতা চালিয়ে থাকে। ২০১৪ সালের এক রিপোর্টে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যাল বলেছে : ১১৭ জন আদিবাসী নারী শারীরিক ও যৌন হামলার শিকার হয়েছেন; তাদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ হলো শিশু; এই নারীদের ২১ জন ধর্ষণ অথবা গণ ধর্ষণের শিকার হন; তাদের মধ্যে ৭ জনকে মেরে ফেলা হয়। এ্যামনেষ্টি রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে যে, ২০১৫ সালের প্রথম কয়েক সপ্তাহে সেই সেনাবাহিনীর চেকপয়েন্টের দৃষ্টি সীমার মধ্যেই তিনটি নিশ্চিত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে যে সেনাবাহিনীর ওই এলাকায় নিরাপত্তা বিধান করার কথা। এইগুলো হলো কেবল প্রকাশ পাওয়া ঘটনা; প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশী হতে পারে। ধর্ষণের ব্যাপারে রিপোর্ট না করা হলো পুলিশের জন্য সাধারণ বিষয় এবং মেডিকেল স্টাফদেরকেও ধর্ষণের বিষয়ে রিপোর্ট না করতে চাপ দেয়া হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ অব্যাহত রয়েছে। আজ তাদের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধির সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে। ২০১৭ সালের ২ জুনের হামলার ব্যাপারে তাদের যে উদ্বেগ তার সাথে আমি সহমর্মিতা পোষণ করি। এটা হলো লংগদুতে আদিবাসী জুম্ম গ্রামে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় বাঙালি সেটলারদের চালানো গণহহারে অগ্নিসংযোগ। বেশ কয়েকটি গ্রামের আদিবাসী জনগণের প্রায় ২৫০টি বাড়ি ও দোকান পুড়ে দেয়া হয়েছে। একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধ নারীকে জীবন্ত পুড়ে মারা হয়, কারণ উনি পালিয়ে যেতে পারেননি। শিশু ও বয়োবৃদ্ধ সহ শত শত মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। স্কুলের শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, কারণ তাদের সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে। এই অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশের উপর বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী সদস্য ও পুলিশ বর্বর হামলা চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বেসামরিকায়নসহ ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের যে দাবি পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী জুম্ম এসোসিয়েশন তুলেছে তা আমি সমর্থন করি। বহু দীর্ঘ সময় ধরে ও এমন চরম আকারে এই লোকগুলো যে দশকব্যাপী সহিংসতার ভুক্তভোগী হয়েছে তা বন্ধের চাবিকাঠি হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে বাস্তবায়ন করা।
——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More