চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েন'র উপর হামলার প্রতিবাদে

ইউনেস্কো সদর দপ্তরের সামনে ইউরোপিয়ান জুম্ম ইন্ডিজিনাস কাউন্সিল-এর প্রতিবাদ সমাবেশ

0

ডেস্ক রিপোর্ট।। চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েন’র উপর হামলা ও সেনা -পুলিশ কর্তৃক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে এবং সেনা কর্তৃক দুই মারমা
মেয়েকে ধর্ষণ-যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে প্যারিসে “ইউনেস্কো সদর দপ্তরের” সম্মুখে প্রতিবাদ সভা ও স্মারকলিপি প্রদান করছে “ইউরোপিয়ান জুম্ম ইন্ডিজিনাস কাউন্সিল”।

গত সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত এ প্রতিবাদ সভায় ইউরোপিয়ান জুম্ম ইন্ডিজিনাস কাউন্সিল এর সভাপতি সুদর্শন চাকমা
এর সভাপতিত্বে তরুন কান্তি চাকমার পরিচালনায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সুনীতি বিকাশ চাকমা।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন ইউরোপিয়ান জুম্ম ইন্ডিজিনাস কাউন্সিল এর সাধারণ সম্পাদক শাক্য মিত্র চাকমা , সন্তোষ বিকাশ চাকমা ,এসোসিয়েশন আজ এর সাধারণ সম্পাদক ফেদেরিক চাকমা , লা ভোয়া দে জুম্ম এর সভাপতি ডমিনিক ক্লোচন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি স্বদেশ বড়ুয়া, উদয়ন বড়ুয়া।

এসময় বক্তারা বলেন, রাঙামাটির বিলাইছড়িতে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার দুই মারমা তরুণীর ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে চাকমা রাণী ইয়ান ইয়ান এর ওপর বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক হামলা যা সভ্য সমাজে মেনে নেয়া যায়না । প্রতিবাদ সভা শেষে ইউনেসকো সদর দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ২১ জানুয়ারি ২০১৮ দিবাগত রাতে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক দুই মারমা তরুণীর যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের প্রতিবাদে ও তাদের ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ইং তারিখে প্রিয় চাকমা রাণী ইয়ান ইয়ান এর ওপর সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কর্তৃক যে বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে ইউরোপে বসবাসরত জুম্ম সমাজ অত্যন্ত ব্যথিত, মর্মাহত এবং একই সাথে ক্ষুব্ধ। ইউরোপে বসবাসরত জুম্মরা মনে করে এই আঘাত পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা সকল জুম্ম আদিবাসী সমাজের উপর অপমান ও চরম আঘাত।

এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী ও সেটেলার বাঙ্গালি কর্তৃক পাহাড়ি আদিবাসী জুম্মদের উপর যেভাবে দিনের পর দিন খুন-হত্যা-ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন, হামলা, মামলা প্রদান করে আসছে তা চরম মানবাধিকার লংঘণ। অতীতে এই সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ মদদ ও সেটেলার বাঙ্গালির সংশ্লিষ্টতায় পাহাড়ে কাউখালী, তবলছড়ি,
মাটিরাঙ্গা, লোগাং, নানিয়ারচর, লংগদুসহ সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে এক ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে ১২ জুন গভীর রাতে রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ি থেকে এই সেনাবাহিনী কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়, যার হদিস এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আর গতবছরের এপ্রিল মাসে সেনাবাহিনীর মেজর তানবীরের নেতৃত্বে কলেজ ছাত্র রমেল চাকমাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। যার কোনটির বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। ইদানিং পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক নব্য মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে পাহাড়ে মেধাবী নেতৃত্ব মিঠুন চাকমাকে দিনে দুপুরে হত্যাসহ, প্রতিনিয়ত নিরীহ জুম্মদের হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, মিথ্যা মামলা এবং একের পর এক ত্রাস ও আতংক সৃষ্টি করে সেনাবাহিনী নীলনকশা বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি চাকমা রাণী ইয়ান ইয়ান এর ওপর বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে। ইউরোপিয়ান জুম্ম ইন্ডিজিনাস কাউন্সিল রাণীর ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক অযাচিত নির্যাতন আক্রমনকে চরম মানবাধিকার লংঘণ মনে করে, যার কারনে এরুপ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ প্রকাশ করছে। এবং এঘটনার জন্য সরকারের নিকট ন্যায়বিচার দাবি জানাচ্ছে।

স্মারকলিপিতে রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ির ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার মারমা দুই তরুনীর নিরাপত্তা ও জড়িত সেনা সদস্যদের যথোপযুক্ত সাজা দাবি জানানো হয়।
——————
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্রউল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More