খাগড়াছড়ির ছাতিপাড়া পাহাড়ের জুমচাষীদের পুনর্বাসন সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান

0

বিশেষ রিপোর্ট॥ খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় ছাতিপাড়া পাহাড়ের জুমচাষীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার জন্য একটি বিশেষ মহল গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকার জন্য ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

জানা যায়, ছাতিপাড়া মোন বা পাহাড় মাটিরাঙ্গার আলুটিলার দক্ষিণ ভাগ থেকে দক্ষিণ দিকে সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের পক্ষীমুড়ো পর্যন্ত বিস্তৃত। পূর্বে এর সীমানা হলো মহালছড়ির বদানালা ও পশ্চিমে গুইমারার দেওয়ান পাড়া। এই সুবিস্তৃত পাহাড় এলাকায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের ১২ – ১৩টি গ্রাম রয়েছে। গ্রামবাসীরা জীবিকার জন্য মূলত মান্ধাতা আমলের জুম চাষ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল।

ইউপিডিএফ ও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বন, পরিবেশ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এবং এলাকার দারিদ্র্য-পীড়িত ও অশিক্ষায় জর্জরিত গ্রামবাসীদের জীবনমান উন্নীত করার লক্ষ্যে পুনর্বাসনের জন্য বহু বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে বহু পরিবারকে সেখান থেকে সরিয়ে জীবিকার নিশ্চয়তাসহ অন্যত্র পুনর্বাসন করা হয়েছে। আরো বেশ কিছু পরিবারকে এ বছর পুনর্বাসন করা হবে।

প্রতীকী ছবি
# প্রতীকী ছবি।

ইউপিডিএফ-এর ওই অঞ্চলের সংগঠক অপু ত্রিপুরা সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘ছাতিপাড়া পাহাড়ের বন ও পরিবেশ রক্ষা করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। জুম ও গাছ ব্যবসার কারণে ওই এলাকার বন ও পরিবেশ সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে কিছুই করছে না। জুম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব হলো জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের। কিন্তু তাদের এ ব্যাপারে কোন ভূমিকা নেই, মাথা ব্যাথাও নেই। পাহাড়ের কোথায় কি অবস্থা তাও তারা জানে না। একমাত্র আমাদের পার্টি ইউপিডিএফ-ই বন ও পরিবেশ রক্ষায় বাস্তব ও কার্যকর ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে আসছে।’

তিনি ইউপিডিএফের এ উদ্যোগের প্রতি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এ বছর ছাতিপাড়া পাহাড় থেকে বেশ কিছু পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা কারোর উপর জোর জবরদস্তি করে এ কাজ করছি না। আমরা ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললে সবাই সহজে বুঝে ফেলে এবং আমাদের প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায়। এ বছরও আমাদের কথায় অধিকাংশ গ্রামবাসী ওই পাহাড় ছেড়ে অন্যত্র পুনর্বাসনে রাজী হয়েছেন। তবে আমরা তাদের মধ্যে এই পর্যায়ে ৬টি চাকমা পরিবার, ৩টি ত্রিপুরা পরিবার ও ৩৯টি মারমা পরিবার অর্থাৎ মোট ৪৮ পরিবারকে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নিয়েছি।’

অপু ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, ‘তবে কিছু ব্যক্তি বিশেষ আমাদের পরিকল্পনা, কর্মসূচী ও কার্যপদ্ধতি না বুঝে কেবলমাত্র শোনা কথায় বিভ্রান্ত ও ভাবাবেগ তাড়িত হয়ে মনগড়াভাবে পুনর্বাসন বিষয়ে অপপ্রচারণা চালাচ্ছে। আর এর সুযোগ নিয়ে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন পার্টি ও জনগণের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টির জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তাদের উদ্দেশ্য কোনভাবে সফল হবে না।’

অথচ এসব ব্যক্তিরা একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের স্বার্থের জন্য কাজ করার কথা বললেও এবং ছাতিপাড়া পাহাড়ের বাসিন্দাদের দরদী সাজলেও আলুটিলার ভূমি রক্ষা আন্দোলনে তাদের টিকিটাও দেখা যায়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং বলেন, ইউপিডিএফ-ই আলুটিলাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণকে সাহসের নেতৃত্ব দিয়েছে।

ছাতিপাড়ার কার্বারী চিত্ত ত্রিপুরার উদ্ধৃতি দিয়ে ইউপিডিএফ সংগঠক অপু ত্রিপুরা বলেন, পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা পেলে গ্রামের তিন/ চার পরিবার বাদে সবাই অন্যত্র চলে যেতে রাজী আছে। তিনি নিজেও আর সেখানে থাকবেন না। কারণ জুম চাষ করে আর সংসার চালানো যায় না। জুমের উৎপাদন নিদারুণভাবে কমে গেছে। তাছাড়া দূর পাহাড়ে থাকলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সমস্যা, চিকিৎসার সমস্যা, বাজারের সমস্যা, পানির সমস্যা ইত্যাদি বহুবিধ সমস্যা দেখা দেয়।

ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম সংগঠক রিকো চাকমা বলেন, যে কয়জন ছাতিপাড়া পাহাড়ের জুমিয়াদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি এবং তাদেরকে অনুরোধ করেছি দু’এক ব্যক্তির কথায় বিশ^াস না করে এলাকায় ঘুরে আসতে এবং লোকজনের সাথে সরাসরি কথা বলতে।

যে কোন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব বলে তিনি মনে করেন এবং বিশেষ মহলের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কাজ না করার জন্য তাদেরকে অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা সস্তা রাজনীতি করি না, জনগণের সামগ্রিক স্বার্থের কথা বিবেচনা করে কাজ করি। যে পুনর্বাসনের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি তা সামগ্রিক জাতীয় ও দেশীয় স্বার্থ বিবেচনা করেই নিয়েছি।’

ইউপিডিএফের গুইমারা অঞ্চলের সংগঠক ক্যহলাচিং মারমা বলেন, ‘কিছু ব্যক্তি নিজেদেরকে ছাতিপাড়া পাহাড়ের বাসিন্দাদের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইলেও তাদের কার্যকলাপ দেখে কারোর বুঝতে অসুবিধা হয় না তারা কারা এবং কী চায়। তাদের কার্যকলাপ মোটেই সামগ্রিক স্বার্থে ও জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে নয়, এমনকি তাদের উদ্দেশ্য ছাতিপাড়া পাহাড়ের জনগণের কল্যাণ নয়, তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ইউপিডিএফ-কে ডিসক্রেডিট করা, পার্টির ভাবমূর্তি ক্ষণ্ন করা।

তিনি প্রশ্ন করেন ‘এই ব্যক্তিগণ কি চায় ছাতিপাড়া পাহাড়ের জনগণ যুগ যুগ ধরে যেভাবে অভাব অনটন, দারিদ্র্য ও অশিক্ষাকে সঙ্গী করে কোন রকম দিন গুজরান করছে সেভাবে আরো যুগ যুগ ধরে পড়ে থাকুক? তারা কি চায় বন ও পরিবেশ ধ্বংস হোক? তারা কি জানে না পাহাড়ে মান্ধাতা আমলের চাষ পদ্ধতি আর বর্তমান যুগের সাথে খাপ খাচ্ছে না? ছাতিপাড়া পাহাড়ের লোকজনকে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হলে তাদের কী অসুবিধা?’

অপু ত্রিপুরার মতে একটি অগ্রসর পার্টি হিসেবে তাদেরকে দুরদৃষ্টি নিয়ে কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, ‘ছাতিপাড়া পাহাড় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের সম্পদ, দেশের সম্পদ। এ অঞ্চলের বাসিন্দা এবং দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের এ সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব রয়েছে। ইউপিডিএফ এই দায়িত্ব পালনে বদ্ধ পরিকর। কারণ আমরা জানি এ সম্পদ রক্ষা করতে যদি আমরা আমাদের বিশেষ দায়িত্ব পালন না করি তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তার জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।’

তিনি ছাতিপাড়া পাহাড়ের বনজ ও প্রাণীজ সম্পদ তথা প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং ওই এলাকার জুম নির্ভর বাসিন্দাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা প্রদানের জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান।
—————-

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More