ঢাকায় নান্যাচর এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন : মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও খুন-অপহরণ-চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি

0

ঢাকা : রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলায় একটি বিশেষ মহলের মদদপুষ্ট চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ ও জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদে এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে নান্যাচর এলাকাবাসী।

সংবাদ সম্মেলন থেকে সন্ত্রাসীদের খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ সকল অপকর্ম বন্ধ করে এলাকার জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে দায়েকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ৪ দফা দাবি জানানো হয়েছে।

এছাড়া আগামী ১২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান ও ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে রবিবার দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নান্যাচর এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নান্যাচর সদর ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতি লাল চাকমা।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলা হয়, গত বছর ১৬ নভেম্বর  থেকে তথাকথিত গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ নামধারী বহু মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত ফেরারী আসামীসহ সশস্ত্র একদল সন্ত্রাসী একটি বিশেষ শক্তিশালী মহলের ছত্রছায়ায় রহস্যজনক পন্থায় নান্যাচরের দৃশ্যপটে আভির্ভূত হয়। সেই দিন থেকে আজ অবধি উক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নির্বিচারে খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অবর্ণনীয় সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের কারণে পুরো নান্যাচর এলাকা এক নৈরাজ্যকর ও আতঙ্কজনক জনপদে পরিণত হয়েছে। সংস্কারবাদী জেএসএস (এমএন লারমা) দলের স্থানীয় নেতা শক্তিমান চাকমা (কয়েক মাস পূর্বে নিহত) ও প্রগতি চাকমা উক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয়সহ সমস্ত রকমের সহযোগীতা দেয়ার কারণে খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এবং সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের মাত্রা আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে  বর্তমানে এলাকার মানুষ অফিস, আদালত, হাট-বাজার থেকে শুরু করে কোথাও নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারছেন না।

এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে আরো বলা হয়, সন্ত্রাসীদের খুন, অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা লাগামহীনভাবে ঘটে চললেও উক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে প্রশাসন সম্পূর্ণ রহস্যজনকভাবে নির্বিকার রয়েছে এবং এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোন নিরাপত্তা বাহিনীকেই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের তৎপরতা চোখে পড়ছে না। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত একটি বিশেষ বাহিনী ঐ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। উক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা নান্যাচর উপজেলা সদরস্থ নান্যাচর বাজার এলাকায় নির্বিঘ্নে বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্থায়ীভাবে অবস্থান করলেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না, উপরন্তু তাদের নিরাপত্তা বিধান করা হচ্ছে। নান্যাচর উপজেলা সদরে অবস্থান করে উল্লেখিত গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এমনভাবে পরিচালনা করছে যে,‘মনে হয় তারা সরকারের লাইসেন্সধারী একদল বৈধ সশস্ত্র গোষ্ঠী’। তাদের বিরুদ্ধে ‘টু শব্দ’ করার যেন কেউ নেই। এলাকার সাধারণ মানুষ বর্তমানে স্থানীয় সেনা জোন, থানা ও উপজেলা প্রশাসনের পরিবেষ্টিত নান্যাচর সদরস্থ বাজারে আসলে দিন-দুপুরে সেখান থেকে উক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক অপহরণের শিকার হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাসীদের দ্বারা খুন, অপহরণের একটি চিত্রও তুলে ধরা হয়। এতে গত বছর নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নান্যাচর উপজেলায় জনপ্রতিনিধি-মুরুব্বীসহ ৫০ জনের অধিক মানুষ অপহরণ ও ৫ জনের অধিক খুন হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা রহস্যজনক খুন হওয়ার ঘটনায় চার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি (চেয়ারম্যান-মেম্বার) ও সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করার ঘটনায় নিন্দা ও অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

গত ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত নান্যাচর উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন বিষয়ে অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বাধা প্রদান ও অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা অবৈধভাবে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে বেআইনীভাবে নজীরবিহীন জাল ভোট প্রদান করেছে। এভাবে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন খুন-অপহরণ মামলার চিহ্নিত আসামী সংস্কারবাদী জেএসএস (এমএন লারমা) দলের প্রার্থী ও বিশেষ বাহিনীর আস্থাভাজন প্রগতি চাকমাকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এলাকায় খুন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জনসাধারণের দুঃখ-দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত ৪ দফা দাবি হচ্ছে- ১. অবিলম্বে নান্যাচর এলাকায় খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা বন্ধ করে নান্যাচর এলাকার জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; ২. নান্যাচর বাজারে অবস্থানরত বিভিন্ন মামলার আসামীদের গ্রেফতারপূর্বক উক্ত সন্ত্রাসীদেরকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে; ৩. নান্যাচর উপজেলার ৪(চার) ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নামে বিভিন্ন ঘটনায় জড়িয়ে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে ও ৪। সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমা হত্যা ও আলোচিত মন্টি-দয়াসোনা চাকমার অপহরণসহ নান্যাচর উপজেলায় এযাব সংঘটিত সকল হত্যা ও অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান সুপন চাকমা, বুড়িঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রমোদ বিকাশ খীসা, ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অমল কান্তি চাকমা, নান্যাচর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কমেন্দু চাকমা, বড়পুল পাড়ার মুরুব্বী উদয় শংকর কার্বারী, সাপমারা গ্রামের মুরুব্বী সঞ্চয় চাকমা, জগনাতুলি গ্রামের মুরুব্বী মিন্টু চাকমা, নান্যাচর সদর ইউপি সদস্য বাবুল চাকমা ও সাবেক্ষ্যং ইউপি সদস্য জীবন আলো চাকমা।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More