প্রথম আলো সম্পাদকীয়
রমেল চাকমার মৃত্যু : সত্য উদ্ঘাটন করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে রমেল চাকমা নামের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক তরুণের মৃত্যুকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। প্রতিবাদে রাঙামাটিতে সড়ক ও নৌপথ অবরোধ এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। রাজধানীতেও প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে। ঘটনাটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। নাগরিক সমাজের মুখপত্ররাও এ বিষয়ে সরকারের কাছে প্রতিকার আশা করেছেন। মানবাধিকারের জায়গা থেকে বিষয়টির মানবিক সমাধান সবারই কাম্য।
রমেল চাকমার স্বজন ও স্বজাতির দাবি, আটক অবস্থায় নির্যাতনে রমেলের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি মৃত্যুর পর তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করা এবং তাদের অজ্ঞাতে দাহ করানো হলে অসন্তোষ আরও তীব্র হয়। সেনাবাহিনীর তরফে দাবি করা হয়েছে, দুটি বাস লুট ও একটি ট্রাক পোড়ানোর মামলায় ৫ এপ্রিল রমেল চাকমাকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। সেদিন রাতেই তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ এরপর পুলিশের তত্ত্বাবধানে রমেল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ এপ্রিল মারা যায়।
রমেল চাকমা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নানিয়ারচর শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিল। এই তরুণের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় কোনো মামলা না থাকার কথা বিবিসিকে জানিয়েছেন নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। এমনকি আহত তরুণকে আসামি হিসেবে না দেখে “রোগী” হিসেবে চিকিৎসা করানোর কথাও তিনি বলেছেন। সুতরাং, সরকারি দুটি সংস্থার ভাষ্য যেমন মিলছে না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পরিবারের দাবিও পরস্পরবিরোধী। পাল্টাপাল্টি দাবি যা-ই হোক, যেকোনো অপমৃত্যুই দুঃখজনক। দৃশ্যত প্রতীয়মান হয়, রমেল চাকমা নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং নির্যাতনজনিত কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর বাস্তবতাও সম্প্রতি খুবই প্রকট হয়েছে। বিষয়টি তাই অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে।
রমেল চাকমার মৃত্যু পাহাড়ের মানুষের মনের অবিশ্বাস আরও গভীর করেছে। এ কারণেই সরকারের উচিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের মনে অন্তত বিচার পাওয়ার মতো সান্ত্বনা সৃষ্টির পদক্ষেপ নেওয়া।
সৌজন্যে: প্রথম আলো
—————————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।