মৃত্যুর হাত থেকে যেভাবে আমি ফিরে এসেছি- পলেন চাকমা
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
পলেন চাকমা, পিতা : মিলন শান্তি চাকমা, গ্রাম : বাবুছড়া নোয়া পাড়া, দিঘীনালা, খাগড়াছড়ি। গত ১৭ এপ্রিল’১১ রামগড়ের জালিয়া পাড়ায় সেটলারদের হামলার শিকার হন। সেটলাররা তাকে মারধর করে এবং মেরে ফেলার জন্য একটি খালি ঘরে বেধে রাখে। তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। সে কিভাবে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেন সিএইচটি নিউজ বাংলার সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন। তার এই বর্ণনাটি হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো-
আমি বর্তমানে আইডিএফ নামে একটি এনজিওতে চাকুরি করি৷ আমার কর্মস্থল গুইমারা শাখায়। গত ১৭ এপ্রিল এনজিও‘র কাজে জালিয়া পাড়ায় গেলে সেটলার বাঙালিরা আমাকে ধরে ফেলে৷ তারা আমাকে মুগর দিয়ে মারধর করে পানিতে ফেলে দেয়। এরপর দৌড়ে আমি ছড়ার ওই পারে পার হই। সেখানেও বাঙালিরা আমাকে মারধর করে এবং একটি খালি ঘরে বেধে রাখে৷ আমার হাতে নগদ ৩০০০ টাকা এবং এবং চার হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল ছিল।
আমাকে যখন বেধে রাখে তখন বাঙালিরা বলাবলি করছে ‘ আমার কাছ থেকে তারা মোবাইল, টাকা কেড়ে নিয়েছে৷ তারা আমাকে মেরে ফেলবে।‘ এ সময় তারা (বাঙালিরা) আর্মি পুলিশের সাথেও কথা বলতে দেখেছি। এবং আর্মি-পুলিশও টহল দিতে দেখেছি।
এ সময় কিছু সাধারণ বাঙালি বলাবলি করছে আর্মিরা সহযোগিতা করছে পুলিশ কোন সহযোগিতা করছে না৷ এরপর ৪/৫ জনের একদল পুলিশ এসে ঐ বাঙালিদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছে ‘তোমরা আমাদেরকে সহযোগিতা দেয়ার কথা, কিন্তু তোমরা আমাদের উপর আরো রাগ করছো‘ এ ধরনের কথাবার্তা বলাবলি করতে শুনেছি৷ বাঙালিদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে আর্মিরাই ঘটনার উস্কানি দিয়েছে।
আমি সেখান থেকে কিভাবে পালিয়ে বেঁচে গেছি তা বর্ণনা করার মতো নয়। গায়ের শক্তি ও ধর্ম এবং উপস্থিত বুদ্ধির জোরে আমি বেঁচে গিয়ে ফিরে আসতে পেরেছি।
যেভাবে আমি পালিয়ে আসি
বাঙালিরা আমাকে মেরে ফেলার জন্য একটি খালি ঘরে তালা মেরে বেধে রাখে৷ আমাকে মেরে ফেলবে বলে সেটলাররা বলাবলি করতে শুনেছি৷ যখন থেকে আমাকে বেধে রাখে তখন থেকেই আমি চিন্তা করছি কিভাবে পালিয়ে যাবো। যে ঘরে বেধে রাখে সে ঘরে তাকিয়ে দেখি একটি দরজা তালা মারা আর একটি দরজা রশি দিয়ে বাধা৷ তখন আমি চিন্তা করছি রশি দিয়ে বাধা দরজা খুলেই পালিয়ে যাবো। তাই আমি রাত হোক রাত হোক করে অপো করতে থাকি৷ রাত হলে আমি কামড় দিয়ে রশি ছিড়ে আস্তে করে ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে আসি৷ তখন বাঙালিরা সামনে তালা মারা দরজার কাছে ছিল৷ একটা সামান্য মাঠ পার হয়ে একটি ছড়ায় এসে পড়ি। তখন রাত আনুমানিক ৭টা বাজবে৷ এভাবেই পালিয়ে এসে বেঁচে যাই।
বাঙালিরা আমাকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে৷ কয়েকটি বাড়ি হাত দিয়ে আটকাতে পারলেও মাথায় মুগরের বাড়ি পড়লে মাথা থেকে রক্ত বের হলে আমি প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়ি৷ তারপর বাঙালিরা হাতে, কোমরে এবং বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে৷ এখন উঠাবসা করতেও কষ্ট হচ্ছে৷ আমার হাত একটি অবস হওয়ার অবস্থা হয়েছে।