অনাদী রঞ্জন চাকমা হত্যার বিচার ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

0

রাঙামাটি : রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলার প্রাক্তন ইউপি সদস্য অনাদী রঞ্জন চাকমাকে হত্যার বিচার ও ‘নব্য মুখোশ বাহিনী’ নামে পরিচিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে নান্যাচর এলাকাবাসী।

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর ২০১৭) সকালে নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব সেন্টু চাকমার নেতৃত্বে নানিয়াচর ও বুড়িঘাট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।

স্মারকলিপিতে তারা নব্য মুখোশবাহিনী সন্ত্রাসী কর্তৃক প্রাক্তন মেম্বার অনাদী রঞ্জন চাকমাকে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের ঘটনাবলী তুলে ধরেন এবং প্রশাসন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ  করছে না বলে অভিযোগ করেন। যেসব ঘটনাবলী ও অভিযোগ স্মারকলিপিতে তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে-

১। গত ১৫ নভেম্বর ২০১৭ থেকে তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা ও শ্যামল কান্তি চাকমা ওরফে তরুর নেতৃত্বে ‘নব্য মুখোশ বাহিনী’ নামে পরিচিত আনুমানিক ২০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল নানিয়াচর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। প্রায় প্রতিদিন সন্ত্রাসীরা এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিয়ে জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করছে।

২। সন্ত্রাসীদের ভয়ে নানিয়াচর উপজেলাধীন ১ নং সাবেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুপন চাকমা (সুশীল জীবন) সহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও এমনকি সাধারণ লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছেন।

৩। গত ৫ ডিসেম্বর নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা সাবেক ইউপি সদস্য অনাদী রঞ্জন চাকমাকে গুলি চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

৪। সন্ত্রাসীরা আজ পর্যন্ত মোট ৩ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। এছাড়া তারা প্রতিদিন জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছে, দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে, বৃদ্ধ নারীসহ (যেমন টিএন্ডটি এলাকার সেলিনা তালুকদার) নিরীহ লোকজনের উপর শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে, এমনকি এক নারী নেত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে।

৫। সন্ত্রাসীদের আস্তানা নানিয়াচর আর্মি জোন ও থানা থেকে গাড়িতে মাত্র ১-২ মিনিটের পথ। কিন্তু তারপরও রহস্যজনক কারণে পুলিশ কিংবা সেনা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। অধিকন্তু গত ১৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার নানিয়াচর সদরে টিএন্ডটির কাছে রাস্তা পার হওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা টহলরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সামনে পড়লেও তাদেরকে আটকের কোন চেষ্টা করা হয়নি।

৬। গত ২৫ নভেম্বর ’১৭ নানিয়াচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদারের কাছে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ সন্ত্রাসীদের কারণে সৃষ্ট আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। কিন্তু তিনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিতে ব্যর্থ হন।

৭। নব্য মুখোশ বাহিনী নামে পরিচিত সন্ত্রাসীরা হলো দাগি আসামী। সন্ত্রাসীদের সর্দার তপন জ্যোতি চাকমার (বর্মা) বিরুদ্ধে রাঙামাটি থানায় ক্যাপ্টেন গাজী হত্যা মামলাসহ অর্ধ ডজন খুন ও অপহরণের মামলা রয়েছে। এছাড়া তার সহযোগীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেও একই ধরনের মামলা রয়েছে।

স্মারকলিপিতে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- ১. অবিলম্বে নব্য মুখোশ বাহিনী নামে পরিচিত সন্ত্রাসী দলের প্রত্যেক সদস্যকে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া; ২. সন্ত্রাসীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন গোপন আঁতাত রয়েছে কীনা সে ব্যাপারে তদন্ত করা এবং প্রমাণ সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও ৩. প্রাক্তন ইউপি সদস্য অনাদী রঞ্জন চাকমার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

স্মারকলিপিতে এলাকাবাসীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন ২নং নানিয়াচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক জ্যোতিলাল চাকমা ও সাবেক মেম্বার ও নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব সেন্টু চাকমা।
————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More