অপহৃত হয়ে আমার সাহস বেড়েছে, হতাশ হতোদ্যম নই – দয়া সোনা চাকমা

1
36

রাঙামাটি : অপহরণের দীর্ঘ ৩৩ দিনের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেয়ে দয়া সোনা চাকমা বলেছেন, অপহৃত হয়ে আমার সাহস বেড়েছে। আমি মোটেই হতাশ হতোদ্যম নই। আন্দোলন সংগ্রামে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তিনি নতুন উদ্যোমে পাহাড়ের স্বাধিকারের আন্দোলনের পাশাপাশি নারী অধিকারের জন্যও সংগ্রাম করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

গত ১৮ মার্চ ২০১৮ রাঙ্গামাটি সদরের কুদুকছড়ি আবাসিক এলাকা থেকে সেনা-পুষ্ট সন্ত্রাসী বর্মা-তরু (তপন জ্যোতি চাকমা – জলেয়া চাকমা) গং কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমা অপহৃত হন।

সেদিন বর্মা, প্রত্যয়, রণয়, এবঙ, জানং, পোলো, মিথন বাপ (বাজে ছড়া) সহ ১২জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী অপহরণকারী দলে ছিল। এর মধ্যে এবঙ ও পোলো মন্টিদের অবস্থানরত বাসাটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

# দয়া সোনা চাকমা

বন্দী দশা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গতকাল শুক্রবার কাউখালির পানছড়ি গ্রামে সিএইচটি নিউজ ডটকমকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে দয়া সোনা চাকমা জানান, অপহরণের পর তাদের প্রথমে নানিয়ারচরের ডাক বাংলার পাশে অবস্থিত কাদামালা ঘাট এলাকার একটি বাড়ীতে ২ রাত রাখা হয়। ২০ মার্চ সন্ধ্যা ৭.৩০টার দিকে বর্মা, উত্তরণ, ঝিমিত ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে মহালছড়ি এলাকায় তাদের পৌঁছে দেয়।

‘এরপর সংস্কার দলের লোকদের নিয়ে তরু, রাপ্রু, পিন্টু, রিটন আমাদেরকে সেখান থেকে গ্রহণ করে সিএনজি যোগে ধনপুদি বাজার এলাকায় নিয়ে যায় এবং পরে পায়ে হেঁটে রাত ১২টার দিকে নবাপাড়ার একটি বাড়ীতে রাখে। সেখান থেকে ২ দিন ২ রাত পাহাড় ডিঙ্গিয়ে মেরুং এলাকার চৌধুরীপাড়ায় প্রমেশ^রের বাড়ীতে আমাদের নেয়া হয়। সেখানে মিথন আমাদের রিসিভ করে। সে-ই মন্টি ও আমাকে দেখা শোনার কাজটি বেশী করেছে। রাতে অবস্থান পরিবর্তন করে মেরুং এলাকার বাজেছড়ায় মিথন বাপ, বড়াদামে সুমেন্টুদের বাসাসহ বিভিন্ন জায়গায় অপহরণের বেশিরভাগ দিনগুলো আমাদের কাটাতে হয়েছে।’

২ এপ্রিল তজিমের নির্দেশে মিথন ও খোকন দয়া সোনা ও মন্টির কাছ থেকে শিখিয়ে দেয়া বুলি আওড়িয়ে জোরপূর্বক ভিডিও বার্তা নেয়। তাদের দিয়ে বলানো হয় তারা বর্মা বা জেএসএস এম এন লারমা সংস্কার দল কর্তৃক অপহৃত হয়নি। ইউপিডিএফ-এর অভ্যন্তরীণ একটি গ্রুপ তাদের অপহরণ করেছে। তাতে অবিলম্বে তাদের উদ্ধারে সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতা কামনা করা হয়।

রাজনৈতিক কারণেই মন্টি ও দয়া সোনাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে তাদেরকে জানানো হয়। অবশ্য তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কি তা জিজ্ঞেস করলেও অপহরণকারীরা সদুত্তর দিতে পারেনি বলে দয়া সোনা চাকমা জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন তাদের প্রশ্ন করি তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি তখন তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি, বরং এ প্রশ্নের উত্তর পাশ কাটিয়ে তারা নানা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় অবতারণা করে।’

দয়াসোনা চাকমার ভাষ্য মতে, অপহরণের দিন প্রত্যয় (দাজ্জে) ও মিথন বাপ (সে মন্টির গালে এক চড় মারে) বাদে অপহরণকারীরে বাকি সবাই তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেছে। তাদের পর্যাপ্ত দেখাশুনা ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাত পা বেঁধে রাখা হয়নি। কাপড়-চোপড়সহ নিত্য ব্যবহার্য জিনিস সরবরাহ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মেরুং থেকে ১৩ এপ্রিল বিজুর দিন অপহরণকারীরা আমাদের দু’জনকে খাগড়াছড়ি সদরের তেঁতুলতলা এলাকায় নিয়ে আসে। গত বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) রাত ৭.৪৫টার দিকে অভিভাবক এবং মুরুব্বীদের উপস্থিতিতে তারা আমাদের মুক্তি দেয়। সে সময় রিপন চাকমা, রাপ্রু মার্মা এবং মিথন চাকমা সহ অন্য এক অপহরণকারী ছিল।’

এর আগে দুপুরে বর্মা ও তজিম মন্টি ও দয়াসোনা চাকমার অভিভাবক এবং মুরুব্বীদের উদ্দেশ্যে ইউপিডিএফ-এর আন্দোলন বিষয়ে নানা কুৎসা মন্তব্য করেন বলে দয়াসোনা চাকমা জানান।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.