আজ ২৫ মার্চ কাউখালী গণহত্যা দিবস

0
169
প্রতীকী ছবি

সিএইচটি নিউজ ডেস্ক ।। আজ ২৫ মার্চ কাউখালী গণহত্যা দিবস। ১৯৮০ সালের এই দিনে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নে রাষ্ট্রীয় মদদে পাহাড়িদের উপর এক বর্বরতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিলো। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কায়েমী স্বার্থবাদীরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। এদিন বৌদ্ধ মন্দির সংস্কারের কথা বলে পাহাড়িদের ডেকে এনে নৃশংসভাবে ব্রাশ ফায়ার করে এবং বাঙালি সেটলারদের লেলিয়ে দিয়ে এই গণহত্যা চালানো হয়। এতে ৩০০-এর অধিক নিরীহ পাহাড়ি প্রাণ হারায়। পুরো এলাকায় পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। রক্ষা পায়নি বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও। এ গণহত্যা ১৯৭১-এ পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সাথে তুলনীয়।

ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে, সেদিন ছিল হাটবার। স্থানীয় সেনা ইউনিটের তৎকালীন দায়িত্বরত কমাণ্ডার হাটে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দেয় যে পোয়াপাড়া বৌদ্ধ মন্দির মেরামত কর হবে। তাই পাহাড়িরা যাতে বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গনে অনতিবিলম্বে হাজির হয়। পাহাড়িরা মন্দির মেরামতের কাজ করার জন্য সেখানে উপস্থিত হলে সেনা কমাণ্ডার সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেয়।  গুলিতে নিমিষেই প্রাণ হারায় শতাধিক পাহাড়ি। নিহতের মধ্যে বাজার চৌধুরী কুমুদ বিকাশ তালুকদার, স্থানীয় ইস্কুল কমিটির সেক্রেটারী কাশীদেব চাকমাও রয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডের পরও সেনারা ক্ষান্ত হয়নি। তারা সেটলারদের নিয়ে পাহাড়ি অধ্যুষিত কাউখালী মুখ পাড়া, পোয়াপাড়া, কাউখালী বাজার, তোং পাড়া এবং হেডম্যান পাড়া আক্রমণ করে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা গ্রামের চারিপাশে ঘিরে থাকে যাতে কেউ বেরুতে না পারে। আর সেটলাররা দা, কুড়াল ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পাহাড়িদের কুপিয়ে হত্যা করে ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। মুখপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, তোং পাড়া আনন্দ মোহন বৌদ্ধ মন্দির, পোয়া পাড়া বৌদ্ধ মন্দির, কাউখালী বৌদ্ধ মন্দির এবং হেডম্যান পাড়া বৌদ্ধমন্দিরও এদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। মারধর করে জখম করা হয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের।

এ হত্যাযজ্ঞের পর এক হাজারের অধিক পাহাড়ি শরণার্থী হিসেবে ভারতের ত্রিপুরায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

ঘটনার প্রায় একমাস পর ২২শে এপ্রিল (১৯৮০) তৎকালীন বিরোধী দলীয় তিন সংসদ সদস্য শাহজাহান সিরাজ (জাসদ), উপেন্দ্র লাল চাকমা (জাসদ) ও রাশেদ খান মেনন (ওয়ার্কাস পার্টি) ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করতে কলমপতি যান।  ঢাকায় ফিরে ২৫ এপ্রিল (১৯৮০) তারা এক সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। এতে তারা জানান, “নৃংশস ঘটনাবলীর খবর সম্পূর্ণ সত্য। ২৫ মার্চ সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে তিনশ পাহাড়ি নিহত ও সহস্রাধিক নিঁখোজ হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডকে একাত্তরের পঁচিশে মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের সাথে তুলনা করে তারা বলেন- এই হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির জন্য লজ্জা।”

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে তারা কলমপতি ইউনিয়নে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, বিচার ও শ্বেতপত্র প্রকাশ, দুঃস্থ পাহাড়ি পরিবারগুলোর যথাযথ নিরাপত্তা সহকারে পুনর্বাসন, বিধ্বস্ত বৌদ্ধ মন্দির পুনর্গঠন, বিভিন্ন জেলা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে শরণার্থী (সেটলার) পুনর্বাসন বন্ধ করা, সেটলারদের অনতিবিলম্বে ফিরিয়ে নেওয়াসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছিলেন।

কিন্তু দীর্ঘ ৪১ বছরেও এ গণহত্যার কোন বিচার হয়নি।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.