আনন্দ প্রকাশ চাকমাসহ আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে নান্যাচরে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ

0


নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪

আনন্দ প্রকাশ চাকমা, কুনেন্টু চাকমাসহ কারাগারে আটক ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মুক্তি এবং ষড়যন্ত্রমূলক সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রাঙামাটির নান্যাচরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফভূক্ত তিন সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন, নান্যাচর উপজেলা শাখা।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট ২০২৪) বেলা ২:০০ টায় নান্যাচর উপজেলার পাতাছড়ি মুখ থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি টিএনটি বাজার হয়ে নান্যাচর সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনে সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি সুমেত চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক অবিচল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন নান্যাচর উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আদর্শি চাকমা ও সাবেক ইউপি সদস্য সেন্ট্রু চাকমা। এতে সভাপতিত্ব করেন গনতান্ত্রিক যুব ফোরাম নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি প্রিয়তন চাকমা।


ইউপিডিএফ সংগঠক অবিচল চাকমা বলেন, লাখ লাখ মানুষের প্রাণ নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে তারা জনতার কাছ থেকে রেহাই পাবে না। জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ রেহাই পাইনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের ফলে স্বৈরাচারী হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে এবং স্বৈরাচারী হাসিনার শাসন থেকে সমতলের মানুষ মুক্তি পেলেও পাহাড়ের জুম্ম জনগণ সেনাশাসন থেকে এখনো মুক্তি পায়নি। শুধু তাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ জনগণ এবং ইউপিডিএফ নেতা-কর্মী আনন্দ প্রকাশ চাকমা, ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমাসহ বহু নেতা-কর্মীদের জেল হাজতে আটকে রাখা হয়েছে এবং আদালত কর্তৃক জামিনপ্রাপ্তদের জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। হাসিনা সরকারের পতনের আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি যেই রকম ছিল বর্তমান অন্তরবর্তীকালীন সরকার গঠনের পরও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।

তিনি সেনা নির্যাতনের ছাত্র নেতা রমেল চাকমার হত্যার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল নান্যাচর জোনের কমাণ্ডার বাহালুল আলমের নির্দেশে ও মেজর তানভীরের নেতৃত্বে ছাত্র নেতা রমেল চাকমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করলে সে বছর ১৯ এপিল চট্টগ্রাম হাসপাতালে তিনি মারা যান। পরে হাসপাতাল থেকে তার মরদেহটি আনার সময় সেনাবাহিনী মরদেহ ছিনিয়ে নিয়ে সামাজি-ধর্মীয় রীতি ছাড়াই পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলে। কিন্তু এ ঘটনার কোন বিচার হয়নি। ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যরাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই ঘটনার বিচার করতে হবে।

তিনি কারাগারে আটক থাকা ইউপিডিএফ নেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমাসহ সকল নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও সকল প্রকার ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ

আদর্শি চাকমা বলেন, জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমাদের অবশ্যই লড়াই  সংগ্রাম করতে হবে। এজন্য নারী সমাজ, ছাত্র সমাজ, যুব সমাজকে অবশ্যই একতাবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামা উচিত। আমরা দীর্ঘ ২৮ বছরেও কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার পাইনি। চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস এখনো সেনাবাহিনীতে বহাল রয়েছেন। এই সমাবেশ থেকে আমি লে. ফেরদৌস সহ কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।  

সেন্ট্রু চাকমা বলেন, হাসিনা সরকার পতনের আগে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্নভাবে শাসন করেছে। সাধারণ জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারান্তরীণ করা হয়েছে। বর্তমান অন্তরবর্তীকালীন সরকার গঠনের পরও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি, অনেক বন্দিকে এখনো মুক্তি দেয়া হয়নি। তিনি সকল বন্দীর মুক্তি দাবি করেন।

সমাবেশের সভাপতি প্রিয়তন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়নের অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সংগঠন ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্খী-সমর্থক এবং জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি অবিলম্বে সকল প্রকার ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে কারাবন্দী সকল নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সেনাশাসন প্রত্যাহারপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালী সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More