আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস আজ

প্রতীকী ছবি। সংগৃহিত
সিএইচটি নিউজ ডেস্ক
শুক্রবার, ৩০ আগস্ট ২০২৪
আজ ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। প্রতি বছর এই দিনে বিশ্বব্যাপী গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি গুম হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার এবং এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গুম হওয়া ব্যক্তিদের জন্য একটি প্রস্তাব আন্তর্জাতিক সনদ হিসেবে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ শীর্ষক সম্মেলনের আন্তর্জাতিক সনদে ৩০ আগস্টকে ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সামগ্রিকভাবে এই সনদের লক্ষ্য গুম বন্ধের পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি বন্ধ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক নয়টি সনদের মধ্যে আটটিতে সই করলেও হাসিনা সরকার গুমবিরোধী সনদে সই করেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে চায়। এর অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেন। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫টি দেশ এই সনদে যুক্ত হয়েছে।
গুমবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করার পর উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন ‘এটি আমাদের জন্য বিশেষ করে মানবাধিকার কর্মীদের জন্য একটি বড় মাইলফলক। আর যেন কেউ কখনো নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কোনো বাহিনীকে দিয়ে কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে নাগরিকদের গুম করতে না পারে এজন্য এই সনদে স্বাক্ষর করা হয়েছে।’
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগ নিয়ে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের সমালোচনা রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিত গোপন বন্দিশালা থেকে দীর্ঘ সময় পর পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতা মাইকেল চাকমাসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মুক্ত হওয়ার পর গুমের বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে। মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা বিভিন্ন মিডিয়ায় তাদের ওপর চলা নিপীড়ন ও গোপন বন্দিশালার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।
মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হন ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকা থেকে। দীর্ঘ ৫ বছর ৩ মাস গুম করে রাখার পর গত ৭ আগস্ট ভোররাতে তাকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার করেরহাট এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসকালে বাংলাদেশে ৭শর বেশি মানুষ গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বহু মানুষের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।
এছাড়া দীর্ঘ ২৮ বছরেও খোঁজ পাওয়া যায়নি পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা লে. ফেরদৌসের নেতৃত্বে বাঘাইছড়ির লাল্যাঘোনার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয় কল্পনা চাকমাকে। তাঁর সন্ধানের দাবিতে এখনো প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৮ জন গুমের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ১২ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং পাঁচ জন ফেরত এসেছে। এখনো ১১ জন গুম রয়েছেন। এর আগে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন। এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৮৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন ফেরত এসেছেন। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন যে, বিশেষ বাহিনী র্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে।
জাতিসঙ্ঘের গুমবিরোধী সনদে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই সনদের যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না, তা দেখভালের জন্য জাতিসংঘেরই ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি কাজ করে থাকে। এ কমিটি পক্ষভুক্ত রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিবেদন যাচাই করে। সনদের ৩৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সনদের পক্ষভুক্ত কোনো দেশে যদি গুমের ঘটনা ঘটে, তবে ওই দেশের পরিস্থিতি দেখার জন্য কমিটির সদস্যরা সেদেশ সফরও করতে পারেন।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।