আন্তর্জাতিক নারী দিবসে খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ সমাবেশ
খাগড়াছড়ি : ‘মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন ও শিশুর যৌন হয়রানি প্রতিরোধে এগিয়ে এসো, রুখে দাঁড়াও’ এই আহ্বানে রাস্তাঘাট-ক্ষেতখামার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিলাইছড়িতে দুই মারমা তরুণী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিতে জড়িত সেনা জওয়ানদের সাজার দাবিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে খাগড়াছড়িতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
আজ ৮ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার সকাল ১১.৪৫ টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরস্থ ইউপিডিএফ এর কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি স্বনির্ভর বাজার হতে বের হতে চাইলে চৌরাস্তার মুখে পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় নারীরা মুর্হুমুর্হু শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে। পরে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মিছিলটি জেলাপরিষদ, নারাঙখিয়া হয়ে উপজেলা পরিষদ এলাকা ঘুরে আবার স্বনির্ভরে এসে খাগড়াছড়ি – পানছড়ি সড়কের পাশে সমাবেশ করে।
এন্টি চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাাড়ি ছাত্র পরিষদের গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক বরুণ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রেশমি মারমা।
বক্তারা বলেন, নারীরা আজ ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারী নির্যাতন ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। আজ নারী দিবসেও মাটিরাংগায় এক পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, অপারেশন উত্তরণের নামে সেনাশাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অগণতান্ত্রিক ১১ নির্দেশনা জারি থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। গতকাল খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সেনাবাহিনীর হামলা তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বহন করে।
বক্তারা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারী দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশেও সরকারীভাবে দিবসটি পালন করা হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন আমরা নারী দিবস পালন করতে যাই তখন সেনাবাহিনী-পুলিশ বাধা দয়ে, লাঠিচার্জ ও নেতাকর্মী আটক করে। তারা আজকে গুইমারায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সমাবেশে সেনা-পলিশের লাঠিচার্জ ও দুইজনকে আটকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালে কল্পনা চাকমাকে অপহরণকারী লে. ফেরদৌসসহ তার দোসরদের এবং সাম্পতিকালে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নকারী সেনা সদস্যদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি। ফলে এসব অপরাধীরা অতি উৎসাহী হয়ে চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েনকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও হাসপাতাল থেকে নির্যাতিত দুই বোনকে অপহরণ করার সাহস পেয়েছে।
বক্তারা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নারী সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে বিলাইছড়ির দুই মারমা বোনের ধর্ষণ-নির্যাতনকারী সেনা জওয়ানদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক সাজা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারী নির্যাতন বন্ধ করে সকল ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।
এছাড়া নারী দিবস উপলক্ষে একই দাবিতে জেলার মহালছড়ি, দীঘিনালা, গুইমারা, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
—————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্রউল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।