আলুটিলা ট্রাজেডি: নিহতদের পরিবারের প্রতি ইউপিডিএফের সমবেদনা, আর্থিক সাহায্য

খাগড়াছড়ি : ‘খাগড়াছড়ির আলুটিলায় ট্রাক চাপায় মানুষ মারার ঘটনাকে আমরা নিছক দুর্ঘটনা বলে মেনে নিতে রাজী নই। এটা একটি মাস মার্ডার বা গণহত্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। ট্রাফিক আইন ও গাড়ি চালনার নিয়ম বিধি মানা হলে এবং প্রশাসন পূর্ব থেকে ঐদিন আলুটিলায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিলে এই বিয়োগান্তক ঘটনা অবশ্যই এড়ানো যেতো।’
ইউপিডিএফ নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা মহালছড়ির চংড়াছড়িতে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপকালে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘সকল দিক থেকে ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত। এমনকি এটা কোন সন্ত্রাসী হামলা কীনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।’
আজ ৫ ফেব্রুয়ারী রবিবার সকালে উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমার নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ১৫ সদস্যের একটি দল শোকাহত পরিবার ও স্বজনদের সমবেদনা জানাতে মহালছড়ি সদরের চংড়াছড়ি গ্রামে যায়।
তাদের সাথে সেখানে মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ক্যচিংমং চৌধুরী, মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সোনারতন চাকমা, কিয়াংঘাট ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চাকমা, মাইসছড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শান্তশীল চাকমা, মহালছড়ি সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান লাব্রেচাই মারমা, চংড়াছড়ি গ্রামের কার্বারী চুইচিনু মারমা ও স্থানীয় ইউপিডিএফভুক্ত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যোগ দেন।

এ সময় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামের লোকজন তাদের ঘিরে ধরেন। ঘটনার দুই দিন পরও সারা গ্রামে তখনো বিরাজ করছিল শোকের কালো ছায়া।
প্রতিনিধি দলের মধ্যে আরো ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সাবেক পৌর কমিশনার কিরণ মারমা, রবিশংকর তালুকদার, অনুপম চাকমা, খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রণিক ত্রিপুরা, ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক রিকো চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা জহেল চাকমা ও এল্টন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা চুইসিং চৌধুরী ও নিদর্শন খীসা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মেনাকি চাকমা ও খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি দ্বিতীয়া চাকমা।
প্রতিনিধি দলের নেতারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের যথোপযুক্ত শাস্তি, নিহতদের পরিবারদের ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
তারা বলেন জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যে আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল, কেবল দায় এড়ানো, লোকদেখানো ও প্রচারণার জন্য এটা করা হয়েছে।
উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন রণিক ত্রিপুরা, কিরণ মারমা ও ক্যচিংমং চৌধুরী ।
পরে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে নিহত নেইম্রা মারমা, টুনটুনি মারমা, ববি মারমা, উচুনু মারমা, মাথিং মারমা ও অংক্যচিং চৌধুরীর পরিবারদের সদস্যদের হাতে আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়।

আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করেন চাইলাগ্য মারমা, চলাপ্রু মারমা, মংমং মারমা ও মংক্রক চৌধুরী। তারা আর্থিক সাহায্যের জন্য ইউপিডিএফের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা বলেন ‘ইউপিডিএফ হচ্ছে জনগণের পার্টি। ইউপিডিএফ সুখে দুঃখে সব সময় জনগণের পাশে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’
এরপর খাগড়াছড়ি ফেরার পথে বেলা ২:৪০টায় আর্মিরা প্রতিনিধি দলকে বিজিতলায় আটকায়। তল্লাশীর পর মহালছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সোনারতন চাকমা ও রবিশংকর তালুকদারকে আটকিয়ে রেখে বাকীদের ছেড়ে দেয়। প্রায় দেড়ঘন্টা পর্যন্ত সেখানে আটকিয়ে রাখার পর বিকাল ৪টার দিকে তাদেরকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ শুক্রবার খাগড়াছড়ির আলুটিলায় বৌদ্ধ ভিক্ষু ভদন্ত চন্দ্রমনি মহাস্থবিরের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ায় রাস্তার পাশে একটি চলন্ত ট্রাক ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লে আট জন মারা যায়।
——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।