ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

0
12

আজ ২৬ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোডিক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) এর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পার্বত্য তিন সংগঠন (পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন) এর যৌথ উদ্যোগে এক পার্টি প্রস্তুতি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয় ইউপিডিএফ।

গঠনলগ্ন থেকে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ইউপিডিএফকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন ও নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে অভিষ্ট লক্ষ্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে ইউপিডিএফ। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখল, অন্যায় দমন-পীড়নসহ সকল ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ সব সময় সোচ্চার রয়েছে। শত দমন-পীড়নেও ইউপিডিএফ দমে যায়নি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাসমূহের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পাশাপাশি ইউপিডিএফ দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি জনগণসহ সমতলের সকল সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াইয়েও সমানভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বের সকল নিপীড়িত জনগণের সাথেও ইউপিডিএফ একাত্মতা প্রদর্শন করে থাকে।

বিগত ২০০৬ সালে জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের মাধ্যমে ইউপিডিএফ ৬ দফা মৌলিক দাবিনামা, ১৬দফা সম্পুরক দাবিনামা ও ২০ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারই ভিত্তিতে ইউপিডিএফ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউপিডিএফ’র মৌলিক দাবিনামাগুলো হচ্ছে – ১. পররাষ্ট্র, মূদ্রা, প্রতিরক্ষা ও ভারী শিল্প ব্যতীত রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সকল বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি আঞ্চলিক সংস্থার নিকট হস্তান্তরিত করার মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন কায়েম করা; ২. পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরুং, খুমি, চাক, খিয়াং, লুসাই, পাংকো, বম, তনচংগ্যা, সাঁওতাল, গুর্খা, অহোমী ও রাখাইন জাতিসত্তাগুলোকে সংবিধানে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং বাংলাদেশে বসবাসরত সকল জাতি ও জাতিসত্তা সমানাধিকার ও সমমর্যাদা ভোগ করবে এই নিশ্চয়তা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা; ৩. বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর জন্য সংরক্ষিত আসনের (মহিলা আসনসহ) বিধান করা ও উক্ত আসনসমূহে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা;  ৪. অপারেশন উত্তরণের নামে বলবৎ সেনাশাসন বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা; ৫. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুনর্বাসিত সেটলারদেরকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা এবং তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের স্ব স্ব জেলায় অথবা অন্য কোন সমতল জেলায় জীবিকার নিশ্চয়তাসহ সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। নতুন সেটলার অনুপ্রবেশ ও পুনর্বাসন বন্ধ করা ও ৬. প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ব্যবস্থাপনার পূর্ণ অধিকার প্রদান করা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের লড়াই চালিয়ে যেতে ইউপিডিএফ বদ্ধ পরিকর। যতই নিপীড়ন-নির্যাতন নেমে আসুক না কেন ইউপিডিএফের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কিছুতেই স্তব্ধ করা যাবে না– এমনই প্রত্যয় দলটির নেতা-কর্মীদের।

এদিকে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদত্ত এক বার্তায় ইউপিডিএফ-র সভাপতি প্রসিত খীসা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে কর্মরত সকল স্তরের নেতা-কর্মী, প্রতিনিধি, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণকে উঞ্চ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

তিনি ‘দমন পীড়ন চালিয়ে ইউপিডিএফ-কে তার আদর্শ, লক্ষ্য ও সংকল্প থেকে এক চুলও নড়ানো যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে না’ বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

প্রদত্ত বার্তায় তিনি অধিকার আদায়ের আন্দোলন জোরদার করতে সবাইকে ইউপিডিএফ-এর পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রকাশ  করা হয়েছে পোস্টার ও বুকলেট

 

আরও পড়ুন:

>> দমন পীড়ন চালিয়ে ইউপিডিএফ-কে তার আদর্শ, লক্ষ্য ও সংকল্প থেকে বিচ্যুত করা যাবে না : প্রসিত খীসা

————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.