নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালী জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়া এবং বাঘাইছড়ি ও দিঘীনালায় পাহাড়িদের উপর সেটলার হামলা ও চিগোন মিলা চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর আহ্বানে আজ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সকল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বর্জন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ইউপিডিএফ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও ৭ সংগঠন জোট বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ১৪ ডিসেম্বর রাতে একযোগে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় পোস্টারিং করেছে ও ফেস্টুন টাঙিয়েছে। এছাড়া ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় কমিটি গতকাল বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়েছে। তাই ইউপিডিএফ-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়িদের বিভিন্ন সংগঠন, জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছে। তবে অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাতে প্রশাসন থেকে শিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় প্রেস সেকশান থেকে সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের অস্তিত্ব পুরোপুরি অস্বীকার করে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। সরকার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৃহত্তর বাঙালি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারও একে একে হরণ করছে। এটি একটি গণবিরোধী, উগ্র জাতীয়বাদী ও ফ্যাসিস্ট সরকার। এ সরকার ফ্যাসিস্ট কায়দায় নিছক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সকল সংখ্যালঘু জাতির ওপর কালাকানুন চাপিয়ে দিচ্ছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সপরে দল হিসেবে দাবি করলেও আওয়ামী লীগ আসলে পাক শাসকগোষ্ঠীর উগ্রমূর্তি ধারণ করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও সেটলার লেলিয়ে দিয়ে মতাসীন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে হত্যাযজ্ঞ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় উস্কানি প্রদান অব্যাহত রেখেছে। ২০১০ সালের ১৯, ২০ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি সাজেক-খাগড়াছড়ি, এ বছর ১৭ এপ্রিল রামগড়ের শনখোলা পাড়া এবং গত ১৪ ডিসেম্বর বাঘাইছড়ি ও দিঘীনালায় সেটলার হামলার ঘটনা তারই প্রমাণ।
বিবৃতিতে বাঘাইছড়িতে অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে এক সেটলার খুনের জের ধরে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে দীঘিনালায় চিগোন মিলা চাকমা (৫০)-কে হত্যা এবং বাঘাইছড়িতে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়িদের উপর হামলা-জখমের সাথে জড়িত সেটলারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে অবিলম্বে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়িত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারপূবর্ক সেনা শাসনের অবসান, সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উপর সেটলার হামলা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য যে, বিগত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হলে ইউপিডিএফ উক্ত বিলের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রামে লাল পতাকা উত্তোলন, বিশেষ ব্যাজ ধারণ, স্মরণাতীত কালের বৃহত্তম মানব বন্ধন, তিন জেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিল। গত ৭ ডিসেম্বর উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মাধ্যমে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল বাতিলের কর্মসূচি পুনঃরুজ্জীবিত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বর্জন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।