ইউপিডিএফ কর্মীকে খুনের মামলায় ফাঁসাতে রামগড় থানার ওসি মাঈন উদ্দিনের ষড়যন্ত্র
সিএইচটি নিউজ ডটকম
রামগড়॥ পুলিশ ইউপিডিএফ কর্মী রঞ্জন চাকমার খুনের মামলায় অভিযুক্ত খুনীদের গ্রেফতার না করে উল্টো জামিনপ্রাপ্ত তারই সহযোগী দুই ইউপিডিএফ সদস্যকে উক্ত খুনের সাথে জড়াতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে চাঁদাবাজি মামলায় জামিন পেলেও জেলে আটকে রাখার জন্য রঞ্জন চাকমার খুনের মামলায় তাদেরকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, অথচ রঞ্জন চাকমার খুনীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
গত ২৮ জুন রামগড়-মাটিরাংগা উপজেলার পিলাক-পরশুরাম ঘাটের বুদ্ধধন কার্বারী পাড়ার চারু বিকাশ চাকমার বাড়িতে ইউপিডিএফ-এর সংগঠক রঞ্জন চাকমা (মেম্বার) ওরফে বিশ্বাস (৪০)-কে গুলি করে খুন করা হয়। রামগড়ের পাতাছড়া ইউপির মহিলা মেম্বার মিসেস অনিতা রোয়াজা ও তার ঝি-জামাই সুলেন চাকমাসহ ৪ জন সশস্ত্র বোরখা সন্ত্রাসী উক্ত ঘটনা ঘটায়। ঐ দিন সেনা-পুলিশ অকুস্থলে এসে রঞ্জন মেম্বারের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে রামগড় থানায় নিয়ে যায়। নিহত রঞ্জন মেম্বারের স্ত্রী মিতা চাকমা (৪০) তার স্বামী হত্যার দায়ে শ্বাশুরী-জামাই অনিতা রোয়াজা ও সুলেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রামগড় থানায় মামলা দায়ের করেন।
মিতা চাকমা সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘মামলার তদন্তের কথা বলে গত ২০ সেপ্টেম্বর রোববার জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন (ফোন নাম্বার-০১৮১৮৭৯১১৯২) আমাকে ফোনে জরুরীতে থানায় যেতে বলেন। আমি বাড়িতে বিভিন্ন সমস্যা ও কাজ থাকায় থানায় যেতে চাই নি। কিন্তু আনোয়ার হোসেন থানায় না গেলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে ভয় দেখান। এরপর অনিচ্ছা সত্বেও অনেক টাকা খরচ করে মোটর সাইকেল ভাড়া করে থানায় যেতে বাধ্য হই।’
তিনি স্থানীয় মুরুব্বী ম্রাথোয়াই মারমাকে সাথে নিয়ে থানায় গেলে নতুন বদলী হয়ে আসা ওসি মাঈন উদ্দিন তার সাথে উল্টা-পাল্টা কথা বলতে শুরু করেন। তিনি (ওসি)এক পযার্য়ে বাদী মিতাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনাকে কোর্টে গিয়ে আপনার স্বামী হত্যার জন্য সংস্কারপন্থী জেএসএস-এর গ্রেপ্তারকৃত দু’জনকে দায়ি করে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে হবে।’ মিতা চাকমা ওসির কাছ থেকে আসামীদের পরিচয় জানতে চাইলে ওসি তাকে সদুত্তর না দিয়ে শুধুই হুকুমের সুরে বলেন,‘তোমাকে ওই আসামীদের বিরুদ্ধে কোর্টে গিয়ে স্বাক্ষ্য দিতে হবে।’
মিতা চাকমা ওসিকে বলেন তিনি কেবল মামলাভুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন। আসলে ওসি এক ইউপিডিএফ কর্মীর খুনের মামলায় জড়িয়ে আরো দুই ইউপিডিএফ সদস্যকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসাতে চাইছেন। সেজন্য তিনি যাদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে তাদের নাম মিতা চাকমার কাছে প্রকাশ করেননি। তিনি মনে করেছিলেন সহজ সরল ও অশিক্ষিত মেয়ে মিতাকে এভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু মিতা এতে রাজী না হওয়ায় ওসির ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়।
এখানে উল্লেখ্য যে, ওসি সাহেব মিতা চাকমার স্বামী ইউপিডিএফ কর্মী রঞ্জন চাকমার খুনের মামলায় যে দুজন ‘আসামীর’ বিরুদ্ধে জোর করে মিতা চাকমার স্বাক্ষ্য আদায় করতে চেয়েছেন তারা হলেন সবুজ মারমা ও দূর্জয় চাকমা। এরাও ইউপিডিএফ সদস্য এবং নিহত রঞ্জন চাকমার সহকর্মী। তাঁদেরকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রামগড়ের পাতাছড়া ইউপির অধীন পূর্ব নোয়াপাড়া থেকে গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তাদেরকে রামগড় থানায় হস্তান্তর করে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়। ইতিমধ্যে তাঁরা আদালতে জামিন পেয়ে গেলেও গত ২১ সেপ্টেম্বর তাদেরকে আবার ইউপিডিএফ কর্মী রঞ্জন মেম্বার হত্যার মামলায় জড়িত করে রামগড় থানায় রিমান্ডে নেয়া হয়। ওসি মাঈন উদ্দিন মিতা চাকমার কাছ থেকে জোর করে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা স্বাক্ষ্য আদায় করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু মিতা চাকমা তাতে রাজী হননি। তিনি ও ম্রাথোয়াই ওসিকে সরাসরি বলেন, ‘সবুজ ও দুর্জয়, রঞ্জন মেম্বার হত্যার সাথে জড়িত নন। তাদেরকে হয়রানির জন্য এভাবে তার হত্যার সাথে জড়িত করে আপনারা চরম অন্যায় করছেন।’ মিতা চাকমা তার স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে ওসিকে বলেন, ‘আপনারা আমার স্বামীর খুনীদের গ্রেপ্তার করছেন না কেন? আমার স্বামীর হত্যার আসামী অনিতা রোয়াজা ও তার সহযোগীরা আপনাদের নাকের ডগায় ঘুরাফেরা করছে, অথচ তাদেরকে না ধরে আমরা যাদেরকে আসামী করি নাই তাঁদেরকে মামলায় জড়িয়ে রামগড় থানায় রিমান্ডে নিলেন কেন?’
মহিলা মেম্বার অনিতা রোয়াজাকে গ্রেপ্তারের দাবি তোলায় ওসি মঈন উদ্দিন রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে মিতা চাকমা ও ম্রাথোয়াইকে যাচ্ছে তাই বলতে থাকেন।
গোপন সূত্রে জানা যায় সেনা বাহিনীর চাপের মুখে ওসি দুই ইউপিডিএফ কর্মী সবুজ মারমা ও দূর্জয় চাকমাকে রঞ্জন মেম্বারের খুনের মামলায় মিথ্যাভাবে জোর করে জড়াতে চেষ্টা করেছেন।
—————————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।