উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ-এর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

0
16

খাগড়াছড়ি : ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার খাগড়াছড়িতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙহিয়া-স্বনির্ভর বাজার এলাকা রঙবেরঙের পতাকায় সাজানো হয়।

সকাল ৭টা ৪০মিনিটে অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্রের সদস্যসহ গণসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ইউপিডিএফ অফিসে উই শ্যাল ওভার কাম গানটি সুরে সুরে গেয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন।

পরে শত শত শিশু-কিশোর ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণে স্বনির্ভর জুম্ম ঠিকাদার কল্যান সমিতি কার্যালয় সংলগ্ন মাঠে বিরাটাকারের বেলুন উড়িয়ে দেন ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক সচিব চাকমা। পার্টির ১৯টি বছরের সংগ্রামময় বর্ণিল প্রতিরোধ সংগ্রামকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যন্ড বাদকদল ১৯বার ব্যান্ডের আওয়াজ বাজাতে বাজাতে বেলুন উড়িয়ে দেয়া হয়। বেলুনে টানানো ফেস্টুনে লেখা ছিলো ”গ্লোরি টু দ্য ইউপিডিএফ”।

বেলুন উড়িয়ে দেয়ার সময় উপস্থিত জনতা ‘লঙ লিভ ইউপিডিএফ’, ‘ইউপিডিএফ দীর্ঘজীবী হোক’ এমন শ্লোগান দিয়ে মুখর করে তোলে।

এরপরে পার্টির ১৯টি বছরে জনগণের জন্য রক্ত দিয়ে লড়াই সংগ্রামে সাহসিকতার সাথে ভুমিকা রেখে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে বিশেষভাবে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক প্রদান করা হয়। পুষ্পস্তবক প্রদানের সময় পার্টির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সচিব চাকমা, নতুন কুমার চাকমা, দেবদন্ত ত্রিপুরা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক যুবফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা, সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরুপা চাকমা, খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রনিক ত্রিপুরা প্রমুখ। পরে শিশুকিশোর ও সাধারণ জনগণ শহীদ বেদীতে তাদের শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন। শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার পরে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন সচিব চাকমা। তিনি বলেন, বিগত ১৯টি বছর ইউপিডিএফকে নানা নির্যাতন নিপীড়ন হামলা মামলা সহ্য করে আসতে হয়েছে। সরকার ও শাসকশ্রেনী পার্বত্য চট্টগ্রামের গণমানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ইউপিডিএফকে দমন করার সকল ধরণের কৌশল প্রয়োগ করেছে; কিন্তু ইউপিডিএফকে কোনোভাবেই থামানো যায়নি। ইউপিডিএফ তার সকল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জনগণের সাথে থেকে সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত রুখে দিতে রাজপথে থেকেছে।

ইউপিডিএফ-এর উত্থানকে রুখতে সরকার সেনা-শাসকচক্র সংগঠনের দলছুট কতিপয় ব্যক্তিকে দিয়ে ‘নব্য মুখোশবাহিনী’ গঠন করে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। মূলত, পার্বত্য জনগণের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও প্রতিরোধকে নিঃশেষ করে দিতেই এই চক্রান্ত চালানো হয়েছে। আগামীতে সরকার শাসকশ্রেণীর এই চক্রান্তও রুখে দেয়া হবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

তিনি শাসকশ্রেনীর জুম্ম ধ্বংসের খেলা নস্যাৎ করে দিতে দেশের বিবেকবান সচেতন জনগণসহ পার্বত্য জনগনের প্রতি সোচ্চার ভুমিকা রাখতে উদাত্ত আহ্বান জানান।

তাঁর বক্তব্য শেষ হবার পর অগ্রণী শিশু কিশোর কেন্দ্র’র ব্যানারে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। ব্যানারের শ্লোগান ছিল “পৃথিবীর উন্নত মহৎ ধারণার সংস্পর্শে আমরাও হতে চাই আলোকিত, প্রকৃত মানুষ হবার নির্বিঘ্ন সাধনার জন্য চাই পূর্ণস্বায়ত্তশাসন”। র‌্যালিটি নারাঙহিয়া, উপজেলা, কলেজে গেইট, চেঙ্গী স্কয়ার ঘুরে এসে টিউফা-দশবল রাস্তা হয়ে বের হয়ে স্বনির্ভর বাজার ঘুরে আবার সমাবেশন্থলে এসে শেষ হয়।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা। মারমা ভাষায় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে তাকে সহায়তা করেন রেশমি মারমা। ত্রিপুরা ভাষায় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে সহায়তা করেন অমল ত্রিপুরা।

এদিকে, আজ ভোর রাতে সেনাবাহিনী খাগড়াছড়ি সদরের রেড স্কোয়ার, মৎস্য ভবন, জেলা পরিষদ ও স্বনির্ভর এলাকায় লাগানো প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এর জবাবে ভোর হওয়ার সাথে সাথে ইউপিডিএফ-এর অকূতোভয় সেনানিরা পুরো এলাকায় ব্যাপক পোস্টার ও শুভেচ্ছা ব্যানার লাগিয়ে দেয়। এছাড়াও স্টেডিয়াম এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী সেনা চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশির নামে সমাবেশে যোগ দিতে আসা শিশু-কিশোরদের বহনকারী গাড়িগুলো থামিয়ে রাখা হয়। সেনাবাহিনীর বাধা সত্বেও শত শত শিশু কিশোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এসে সামিল হয়।
—————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.