এক একর জমি লিখে দেয়ার শর্তে পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুর রহিমের জামিন!

0

ডেস্ক রিপোর্ট, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩

ধর্ষণে অভিযুক্ত ও যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আবদুর রহিম। ফাইল ছবি

নির্যাতিতকে এক একর জমি লিখে দেয়ার শর্তে লংগদুতে পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রহিমকে (৪৬) তিন মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই মাসের মধ্যে ভিকটিমকে ওই এক একর জমি হস্তান্তর করতে বলেছেন আদালত। সম্প্রতি এ জামিন আদেশের লিখিত অনুলিপি প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেছে।

বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার করল্যাছড়ির আর এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমের জামিন আবেদনের শুনানি শেষে গত ১ জুন এ আদেশ প্রদান করেন।

পাশাপাশি এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে আদেশ যাতে পুনর্বিবেচনা করা যায়, সেজন্য বিষয়টি ১৫ দিন পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়।

গত ১৫ জুন মামলাটি আবার কার্যতালিকায় আসে। এরপর অধস্তন আদালতের প্রক্রিয়া শেষে গত ২১ জুন আসামি আবদুর রহিম রাঙামাটির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

মামলায় আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রেজাউল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।

আদালত আদেশে বলেন, মামলার উপরোক্ত তথ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের আইনজীবীদের দাখিল করা অঙ্গীকারনামার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আব্দুর রহিমকে তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিচ্ছি এই শর্তে যে, আপিলকারী (আব্দুর রহিম) উপরোক্ত জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে উপরে বর্ণিত হিসাবে (জমি হস্তান্তর সম্পন্ন করে) একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেবেন। আপিলকারী (আসামি) উপরোক্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, আদালত এক একর জমি লিখে দেয়ার শর্তে আসামিকে (আবদুর রহিম) জামিন দিয়েছেন। এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই জমি ভিকটিমের পরিবারের অনুকূলে হস্তান্তর না করলে আমরা আসামির জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করব।

হাইকোর্টের লিখিত আদেশে দুই পক্ষের জামিন শুনানির প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় তুলে ধরে বলা হয়েছে, আপিলকারীর (আবদুর রহিম) আইনজীবী রেজাউল করিম দাবি করেছেন যে, আপিলকারী এরই মধ্যে মামলার ভিকটিমকে বিয়ে করেছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ও তার মায়ের একটি হলফনামা আদালতে দাখিল করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম। এতে বলা হয়েছে, ভিকটিম আসামিকে বিয়ে করেছেন এবং তিনি (ভিকটিম) যেকোনো শর্তে আসামির জামিন চান।

তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ভিকটিম একটি ভিন্ন ধর্ম ও জাতিসত্তার মেয়ে এবং ভিকটিমের মা একজন দরিদ্র মহিলা। এ বিয়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং জামিন পাওয়ার পর ভিকটিমকে আসামির বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হতে পারে। এজন্য ভুক্তভোগীর ভবিষ্যতের জন্য কিছু আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আবেদনকারীকে (আসামি) বলা যেতে পারে।

এ পর্যায়ে বিষয়টির ওপর শুনানি স্থগিত রাখা হয়। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতে একটি সম্পূরক হলফনামা দাখিল করেন, যাতে বলা হয়, জামিন পাওয়ার পর দুই মাসের মধ্যে আপিলকারী (আসামি) নিবন্ধিত দলিলের মাধ্যমে ভিকটিমের অনুকূলে এক একর জমি হস্তান্তর করবেন। যদি তিনি তা পালন করতে ব্যর্থ হন, তবে তিনি আর জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করবেন না।

আদালত আদেশে বলেন, মামলার উপরোক্ত তথ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের আইনজীবীদের দাখিল করা অঙ্গীকারনামার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আবদুর রহিমকে তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিচ্ছি এই শর্তে যে, আপিলকারী (আবদুর রহিম) উপরোক্ত জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ওপরে বর্ণিত হিসাবে (জমি হস্তান্তর সম্পন্ন করে) একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেবেন। আপিলকারী (আসামি) উপরোক্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির লংগদু উপজেলার করল্যাছড়িতে এক স্কুলছাত্রী (১৬) ছাগল খুঁজতে বের হলে সেখানকার আরএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম লেবু দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে গিয়ে স্কুলের রুমে দরজা বন্ধ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। সে সময় স্কুলে কেউ ছিল না। বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি দিতে থাকেন ওই শিক্ষক। ঘটনার ৯ দিন পর ৫ অক্টোবর ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে লংগদু থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়।

২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর আবদুর রহিমকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন রাঙামাটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এইএম ইসমাইল হোসেন। একই সঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামি আবদুর রহিম। পাশাপাশি তিনি জামিন চেয়েও আবেদন করেন। গত ৩০ মার্চ এ বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More