ইতিহাসের এই দিন
ঐতিহাসিক লোগাঙ পদযাত্রা
আজ ২৮ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৯২ সালের এই দিনে লোগাঙ গণহত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক পদযাত্রা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে এ পদযাত্রায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা যোগ দেয়।
সেদিন লোগাঙ গণহত্যার প্রতিবাদ ও শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে খাগড়াছড়ি শহরের কড়ইতলা থেকে শুরু হয় লোগাঙ অভিমুখে এই পদযাত্রা। হাজার হাজার নারী পুরুষ বাড়ী ঘর থেকে বেরিয়ে এসে খর রৌদ্রে এই পদযাত্রায় সামিল হন। ঢাকা থেকে আগত প্রগতিশীল বিপ্লবী রাজনৈতিক দলের নেতা, ছাত্র নেতা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মি ও লেখকরাও জুম্ম জনগণের আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে এই পদযাত্রায় অংশ নেন। তাদের এই অংশগ্রহণ জুম্ম জনগণের মনে আরো বেশী শক্তি ও সাহস সঞ্চার করে।
যে সময় লোগাং পদযাত্রা হয়, তখন যুদ্ধ বিরতি ছিলো না। রাস্তায় ছিলো সেনা চেকপোষ্ট ও টহল। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় সেদিন সেনাবাহিনীর তাক করা রাইফেল সাব-মেশিনগান উদ্যত রক্ত চক্ষু কোন কিছুই প্রতিবাদী ছাত্র-জনতাকে স্তব্দ করে দিতে পারেনি। সেদিন জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে সেনা শাসকরা পরাজিত হয়। জনগণ বীরদর্পে এগিয়ে যায়। সূচিত হয় জনতার বিজয়।
জুম্ম ছাত্র-জনতা পদযাত্রা সহকারে হত্যাযজ্ঞস্থল লোগাঙ পোড়া ভিটায় অস্থায়ী স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান জানায়। অজানা শহীদদের ধর্মীয় বিধান মতে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে দেয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল সেনাবাহিনী,বিডিআর, আনসার-ভিডিপি’র সহযোগিতায় সেটলার বাঙালিরা খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাঙ গুচ্ছগ্রামে বর্বর গণহত্যা সংঘটিত করে। সেটলাররা দা, বটি, কুড়াল দিয়ে পাহাড়িদের উপর আক্রমণ করে এবং সেনাবাহিনী ও বিডিআর(বিজিবি) নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে কয়েকশত পাহাড়ি হতাহত হয়। অনেকে নিঁখোজ হয়ে যায়। সেদিন শিশু, বৃদ্ধ, নারী কেউই রেহাই পায়নি। অগ্নিসংযোগ করে ছাই করে দেওয়া হয় ৭ শতাধিক ঘরবাড়ি।
—————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।