
।। পারদর্শী ।।
খাগড়াছড়ির পানছড়ি থানার ওসি জব্বারের নেতৃত্বে পুলিশ গত ২৩ অক্টোবর কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত অসুস্থ মায়ের সামনে থেকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমাকে গ্রেফতার করে। সেদিন বিপুল চাকমা মাকে জরুরী চিকিৎসার জন্য একটি মাইক্রোবাসযোগে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। সাথে ছিলেন তার বাবাও। পথিমধ্যে পানছড়ি থানার সামনে ওসি জব্বারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস আটকায় এবং বিপুলকে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে গালিগালাজ করতে করতে থানায় নিয়ে যায়। ছেলেকে গ্রেফতার করতে দেখে মা নিরুদেবী চাকমা তৎক্ষণাত আরো বেশি গুরুতর অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ফলে তাকে চট্টগ্রামে নেয়ার বদলে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছেলের গ্রেফতার হওয়ার ধাক্কা সামলে উঠতে না পেরে ওইদিন দিবাগত রাত ৩টার দিকে মারা যান বিপুলের মা নিরুদেবী চাকমা।
গত ২৫ অক্টোবর মায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিপুল চাকমা কারাগার থেকে কিছু সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি পান। সেদিনও পুলশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে, রশি বেঁধে, পায়ে ডান্ডাবেড়ি লাগিয়ে মায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে হাজির করে। হাজার হাজার মানুষ সেদিন এই দৃশ্য দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাস্তায় লাইনে দাঁড়িয়ে শ্লোগান দিয়ে হাজারো জনতা সেদিন বিপুলকে সম্মান জানায়। ওইদিন বিপুল চাকমা মায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার মানুষের সামনে ওসি জব্বারের অমানবিক আচরণের বর্ণনা দেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আপনারা জানেন দীর্ঘদিন ধরে মা অসুস্থ। গাড়ির উপরে মা রক্ত বমি করছিলো। পানছড়ি থানার সামনে পুলিশ আমাকে আটকায়। আমি ওসি জব্বারকে অনুরোধ করেছিলাম অসুস্থ মায়ের সামনে যাতে আমাকে গালিগালাজ করা না হয়। তারপরও আমার অনুরোধ তোয়াক্কা না করে তারা (পুলিশ) আমাকে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় মা এবং বাবার সামনে থেকে। এরপর তারা আমাকে গালিগালাজ করতে করতে থানায় নিয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পর আমাকে গাড়িতে করে খাগড়াছড়ি নেওয়া হয়।”
এখানে স্পষ্ট যে, পুলিশ যদি সেদিন এই অমানবিক আচরণ না করতো তাহলে নিরুদেবী চাকমা হয়তো আরো কয়েকদিন বেঁচে থাকতেন। তাঁর এই মৃত্যুর জন্য অবশ্যই পুলিশের এই অমানবিক আচরণই দায়ী।

একজন মৃতপ্রায় মায়ের সামনে এভাবে ছেলেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া, গালিগালাজ করা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় বিপুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। একজন ছাত্র নেতা হিসেবে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে অসুস্থ মায়ের সামনে থেকে টেনে হিঁচড়ে নিতে হবে কেন?
পুলিশ তথা সরকারকে এটা মনে রাখা দরকার যে, বিপুল চাকমা কোন চোর, ডাকাত কিংবা খুনি-সন্ত্রাসী নয়। বিপুল চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকাহারা, নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে একজন নেতা। পুলিশতো স্বচক্ষে দেখেছে মায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে হাজারো জনতা বিপুলকে কী রকম সম্মান জানিয়েছে। সেদিনতো বিপুলকে সত্যিকার একজন বীরের সম্মানই দিয়েছিল জনতা। তাহলে পুলিশ কি করে বিপুলের মতো একজন ছাত্রনেতাকে গাড়ি থেকে অসুস্থ মায়ের সামনে টেনে হিঁচড়ে নামায়, গালিগালাজ করে?
সেদিন অসুস্থ মা এবং বাবার সামনে ওসি জব্বারের নেতৃত্বে পুলিশ বিপুলের সাথে যে আচরণ করেছে তার অবশ্যই বিচার হওয়া দরকার। কিন্তু সরকার কি এই জব্বারদের বিচার করবে?
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত ]
—————————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।