নিজ দেশে পরাধীন জীবন

কক্সবাজার জেলার চাকমারা ভালো নেই

ফেসবুক থেকে

0
837

অনলাইন ডেস্ক ।। কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং, শিলখালী, মনখালী, লাতুরিখোলা, লম্বাঘোনা, উলুবনিয়া ইত্যাদি গ্রাম ও এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজরের অধিক চাকমা শত শত বছর ও যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। ১৯৪৭/৪৮ দেশ ভাগের পূর্বে কক্সবাজার জেলার চাকমারা নিজ নিজ ভূমিতে জুম চাষ করে অতীব সুখে শান্তিতে ছিলেন এবং আরাকানের ওয়েলাডং, তামাইংসা, লেমাইং, ক্ষামংছিক, তম্ব্রু ও নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমের চাকমাদের সাথে এক ভুখন্ডে বসবাসসহ সামাজিক যোগাযোগ বেশ ভালোই ছিলো। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর এক ভুখন্ড হতে দু ভূখন্ডে ভাগের ফলে দু দেশের নাগরিক হয়ে যায়।

কক্সবাজার জেলার চাকমারা কেউ ভালো নেই। কারণ, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধিনতার পর চাকমাদের শত শত বছর ও যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসা গ্রাম,জুম ভূমি সবই রাষ্ট্র কতৃক বন বিভাগের বনাঞ্চল ঘোষনা করার ফলে আজ নিজ ভূমিতে পরবাসী এবং কঠিনতর জীবন যাপনে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এখন চাকমাদেরকে নিজ ভুমি ও নিজ গ্রামে বন বিভাগের ভিলেজার হিসেবে পরাধীন হয়ে বসবাস করতে হয়। জুম করার আর কোন জুম ভূমি নেই। তাই বাধ্য হয়ে দিনমজুরে পরিনত হয়ে গেছে। যার ফলে দারিদ্রতার কারনে ছেলে মেয়েদের শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান দিতে পারছে না। আরো সবচেয়ে মারাত্নক হচ্ছে চাকমাদের ঘরে ঘরে বন মামলার আসামী এবং ৫০% অধিক চাকমা বন বিভাগের মামলায় আসামী হয়ে অনেকে জেলে খাটছে, অনেকে ফেরারি জীবন কাটছে ও অনেকে খুবই কষ্ট করে, না খেয়ে মামলা পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ বন বিভাগের বন প্রহরিরাই গাছ চুরি করে। মামলা করে চাকমাদের বিরুদ্ধে।এই হচ্ছে বাস্তব কাহিনী।

অপরদিকে প্রায় সময় চাকমাদের উপর সাম্প্রদায়িকতামুলক আক্রমন হয়। নারী নির্যাতন, ধর্ষনের ঘটনায় শিকার হতে হয়। তাই চাকমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জানমালের নিরাপত্তার অভাব এবং প্রতিনিয়ত রোহীঙ্গা সন্ত্রাসীদের ভয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। প্রতিটি মুহুর্তে শুধু ভয় ও আশংকার জীবন। এই চাকমাদের দুঃখের জীবন কে দেখবে? কে বাঁচাবে? কে রক্ষা করবে? এইসব চাকমাদের দুঃখের কাহিনী হয়তো অনেকের অজানা। তাই, কোন মানবিক সংস্থা থাকলে কক্সবাজার জেলার চাকমাদের পাশে দাঁড়ানোর বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

দীর্ঘ ৬০/৭০ বছর অধিক নিজ ভুমিতে পরবাসীর জীবন ও সীমাহীন দারিদ্রতার কারনে চাকমাদের নিজ পোষাক, সংস্কৃতি পর্যন্ত আর রক্ষা করতে পারছে না। যাকে বলে অমানবিক জীবন!!!

বিঃ দঃ- হয়তো অনেকেই চাকমা শব্দটি বিতর্কিত করতে পারেন। কারণ, ঐ অঞ্চলের বর্তমান প্রজন্ম যাদের বয়স ৩০/৩৫ বছর। তাহারা তঞ্চঙ্গ্যা লিখে থাকেন এবং ৩৫ বছর বয়সের উর্দ্ধে বয়সীরা এখনো চাকমা লিখে থাকেন এবং নিজেদেরকে চাকমা পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যাহা কম বেশী সকলেই জানেন। সুতরাং কেন চাকমা লিখলাম ইহার দায় আমি নই।

* লেখাটি Asak Ching la Mong-এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.