পা.চ. নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিবৃতি
কল্পনা চাকমা অপহরণের তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান, চিহ্নিত অপহরণকারীদের শাস্তি দাবি
রাঙামাটি : হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে মামলার ৩৯তম তদন্ত কর্মকর্তা রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানের আদালতে প্রদত্ত চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে চিহ্নিত অপহরণকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন। সংগঠন দু’টি কঠোর কর্মসূচির দেয়ারও হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে।
আজ রবিবার (১৬ অক্টোবর) পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা এক যুক্ত বিবৃতিতে ১৯৯৬ সালের কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে আদালতে রাঙামাটি পুলিশ সুপার কর্তৃক প্রদত্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘এটিও পূর্বের তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর মতোই পুরোপুরি সাজানো, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং স্পষ্টতই চিহ্নিত অপরাধীদের রক্ষার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।’
সংবাদ মাধ্যমে দেয়া যুক্ত বিবৃতিতে নারী নেতৃদ্বয় বরাবরের মতোই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অপহরণের জন্য লে. ফেরদৌস গং’কে দায়ি করে বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তদন্ত কর্মকর্তা রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপারের রিপোর্ট কখনই মেনে নেবে না এবং দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির নিকটও তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
বিবৃতিতে নারী নেতৃদ্বয় অপহরণের ব্যাপারে ‘গণতদন্ত কমিশন গঠন’ এবং চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘ঘটনার পর থেকেই সরকার ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অপহরণকারীদের রক্ষার মরিয়া চেষ্টা লক্ষণীয়। অপহৃতদের একজন কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমার সাক্ষ্যসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও শক্তিশালী সাক্ষ্যপ্রমাণ ও আলামত থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় না এনে সরকার এটাই প্রমাণ করেছে যে, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনের শাসন ও সংবিধান-স্বীকৃত মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নয়।’
বিবৃতিতে নারী নেতৃদ্বয় সরকারের দ্বিচারিতা তুলে ধরে বলেন, ‘অপরাধ সংঘটনের ৪০ – ৪৫ বছর পর সরকার ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে এবং পরোক্ষ সাক্ষ্য ও বেঁচে যাওয়া ভিকটিমদের জবানবন্দীর ভিত্তিতে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করছে, অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় ঠিক তার উল্টোটাই করছে, প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের রক্ষা করে চলেছে।’
নেতৃদ্বয় অবিলম্বে টালবাহানা বন্ধ করে কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার সাথে জড়িত লে. ফেরদৌস, ভিডিপি নুরুল হক ও পিসি সালেহ আহম্মেদসহ তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান এবং তাদের জবানবন্দীর ভিত্তিতে কল্পনা চাকমাকে দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার ৩৯তম তদন্ত কর্মকর্তা রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে বলেছে ‘আমার তদন্তকালে ভিকটিমের অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় তাহাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই।…বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করিয়াও ভিকটিম কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার এবং মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয় নাই।…প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই। ভবিষ্যতে কল্পনা চাকমা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে বা তাহাকে উদ্ধার করা সম্ভব হইলে যথানিয়মে মামলাটির তদন্ত পুনরুজ্জীবিত করা হইবে।’
এর আগে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিআইডি’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক মো. শহীদুল্লাহর দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনেও একইভাবে বলা হয়েছিল ‘সাক্ষ্য ও প্রমাণের অভাবে কল্পনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই। ভবিষ্যতে কল্পনা চাকমা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে বা উদ্ধার করা সম্ভব হইলে যথানিয়মে মামলাটির পুনরায় তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।’
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।