কাউখালীতে কলমপতি গণহত্যা দিবসে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

0

কাউখালী প্রতিনিধি ।। রাঙামাটির কাউখালীতে কলমপতি গণহত্যার ৪২ বছর উপলক্ষে আজ ২৫ মার্চ ২০২২, শুক্রবার বিকাল ৩টায় আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কাউখালী উপজেলা শাখা।

‘‘সহস্র শোক জ্বেলে দিক প্রতিবাদের অগ্নিমশাল” স্লোগানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পিসিপি’র কাউখালী উপজেলা শাখার সভাপতি সুমন চাকমার সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কাউখালী উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ক্যাথুই মারমার সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রতিনিধি অভি মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কাউখালী উপজেলার সভাপতি পাইথুইমা মারমা, পিসিপ ‘র রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সতেজ চাকমা ও এলাকার মুরুব্বীবৃন্দ। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কলমপতি ইউনিয়নের সভাপতি হলাক্যামং মারমা।

আলোচনা সভা শুরুতে কলমপতি গণহত্যায় সকল শহীদ ও এযাবতকালে অধিকার আদায় করতে গিয়ে যারা বীরদর্পে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

আলোচনা সভায় বক্তারা লোমহর্ষক কলমপতি গণহত্যার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ১৯৮০ সালের এই দিনে কলমপতি ইউনিয়নের পোয়াপোড়া বৌদ্ধ বিহার সংস্কারের কথা বলে স্থানীয় পাহাড়িদের ডেকে নিয়ে সেনাবাহিনী ব্রাশফায়ার করে ও সেটলার বাঙালিদের লেলিয়ে দিয়ে এই নৃশংশভাবে গণহত্যা চালায়। সেটলাররা সেটলাররা দা, কুড়াল ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পাহাড়িদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়। বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও মারধর করে গুরুতর জখম করা হয়।  এ হত্যাকাণ্ডে বাজার চৌধুরী কুমুদ বিকাশ চাকমাসহ অন্তত ৩০০ জনের অধিক পাহাড়ি নিহত হয়।

বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্গ্রামে শুধু কাউখালীর কলমপতি গণহত্যা নয়, লোগাং, নান্যাচর, লংগদু, মাল্য গণহত্যা গণহত্যা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত যে ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে সকল গণহত্যার সাথে এ অঞ্চলে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর একটি অংশ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। এসব গণহত্যার একটিরও বিচার ও জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি হয়নি।

বক্তারা আক্ষেপ করে বলেন, ৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তখন আমরা পাহাড়ের মানুষেরা করেছিলাম এই বুঝি আমরা নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেলাম। কিন্তু সময় অতিক্রান্ত হতেই আমাদের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা সব ধুলিস্যাৎ হয়ে গেলো। পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে মুক্তি হয়েই স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে পাকিস্তানিদের কায়দায় পাহাড়িদের ওপর গণহত্যার পথ বেছে নেয়। একের পর এক তারা গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত করে। নিপীড়ন-নির্যাতন জোরদার করে। যা আজো চলমান রয়েছে।

বক্তারা কাউখালীর কলমপতি গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার দাবি করেন। একই সাথে তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ নিরীহ জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, অন্যায়ভাবে ধরপাকড়, বিচার বর্হিভূত হত্যা, নারী নির্যাতন ও উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল বন্ধেরও দাবি জানান।

আলোচনা শেষে সকল শহীদদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More