কাউখালী প্রতিনিধি ॥ রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার তালুকদার পাড়া হতে কাউখালী সদর সড়কে সিএনজি চালকদের দৌরাত্ম্যে এলাকার সাধারণ পাহাড়ি যাত্রীরা অতিষ্ঠ ও জিম্মি হয়ে পড়েছে। ‘কাউখালী সিএনজি সমবায় সমিতি লিঃ’ নামক এ সমিতির লোকজন প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলে সিএনজি ব্যতীত জীপ, মোটর সাইকেলে যাত্রী বহনে বাধা প্রদান ও সাধারণ যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর উল্লো রাঙ্গী পাড়ার স্বর্ণ বাশী চাকমা তার সন্তান সম্ভবা অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালে নিতে চাইলেও সিএনজি চালকদের বাধার কারণে হাসপাতালে নিতে পারেননি। এতে তার স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করেন।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর কাউখালী সদর থেকে পিএসসি পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফেরার পথে উল্লোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের বহনকারী জীপ গাড়িটি উল্লো পাড়ায় প্রবেশে বাধা প্রদান করে এবং গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় সিএনজি চালকরা। তাদের যুক্তি হলো জীপ গাড়িতে না গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সিএনজিতে করে যেতে হবে।
জীপ গাড়ির মালিক চাচি মং মারমা জানান, এই রাস্তায় যে ৪/৫টি জীপগাড়ি চলাচল করে সেগুলোর মালিক হলেন সবাই পাহাড়ি। ফলে বাঙালি বাঙ্গালি সিএনজি চালকরা তাদের জীপগাড়িগুলো চালাতে বাধা দিয়ে থাকে।
সমিতিতে বাঙ্গালি সিএনজি চালকদের প্রাধান্য বেশি থাকায় দুয়েক জন পাহাড়ি সিএনজি চালক থাকলেও তারা টু শব্দও করতে পারেন না।
থৈইপ্রু মারমা নামে এক সিএনজি চালক বলেন, বাঙ্গালি সিএনজি চালকরা আমাদের যা ইচ্ছে তা-ই করে। আমরা পাহাড়ি যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেয়। আমরা অসহায়।
এদিকে ভাড়ার ক্ষেত্রেও সিএনজি সমিতির কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। রাণী হাট থেকে কাউখালী সদরের দূরত্ব ৮.৫ কিলোমিটার। ভাড়া ২০ টাকা। অপরদিকে কাউখালী সদর থেকে তালুকদারপাড়ার দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। অথচ ভাড়া নেয়া হয় ৩০ টাকা। অর্থাৎ এই সড়কে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুন ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
শুষ্ক মৌসুমে এ সড়ক হয়ে পানছড়ি ও উল্লোপাড়া পর্যন্ত সিএনজি, জীপ, ট্রাক, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন গাড়ি চলাচল করতে পারে। এলাকার জনগণ ৫/৬ মাস পর্যন্ত যোগাযোগের ক্ষেত্রে এর সুফল ভোগ করে থাকেন। কিন্তু সিএনজি চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দৌরাত্মের কারণে তারা এ সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সিএনজি চালকদের এমন দুুর্ব্যবহার ও দৌরত্ম্যের প্রতিবাদে এলাকার জনগণ গতকাল সোমবার (৩ ডিসেম্বর ২০১৮) কাউখালী বাজারের সাপ্তাহিক হাটের দিনে সিএনজিতে না চড়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পায়ে হেঁটে বাজারে গেছেন। নতুন বিকল্প রাস্তা হিসেবে তারা আজ মঙ্গলবার উল্লোপাড়া হতে ঘাগড়া বাজার পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। এলাকার শতাধিক নারী পুরুষ এ কাজে অংশ নিয়েছেন।
রাঙ্গীপাড়ার কার্বারী সুকুমার চাকমা বলেন, সিএনজি চালকদের দৌরাত্ম্যে এলাকার জনগণ প্রতিবছর তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকেন। ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে জনগণ এবার তাদের গাড়িতে না চড়ে পায়ে হেঁটে বাজারে যাওয়ার মাধ্যমে তার প্রতিবাদ করছেন। সিএনজি সমিতি যদি তাদের আচরণে পরিবর্তন না আনে তাহলে আমরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাদের বর্জন করবো।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।