কাউখালী প্রতিনিধি ॥ রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের উপর ও নীচ কোলা পাড়া গ্রামে সেনাবাহিনীর তৎপরতায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পণ্ড হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর ২০১৮) উপর কোলাপাড়া গ্রামের বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধদের দিন ও রাত ব্যাপী বাৎসরিক বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান ছিল। সারাদিনের অনুষ্ঠান মোটামুটি সফল হলেও রাতের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি (ধর্মীয় কীর্তন) মধ্য রাতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে পণ্ড হয়ে যায়। সেনারা সেখানে কি অনুষ্ঠান হচ্ছে, কেন হচ্ছে তা উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে জানতে চায় এবং লোকজনকে অহেতুক ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। জাতীয় পরিচয় পত্র দেখতে চায়। এতে লোকজন ভয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে যে যার মতো চলে যায়। কাউখালী আর্মি ক্যাম্প থেকে ৩০ জনের এ সেনা দলটিকে নাইল্যাছড়ি এলাকার সেটেলার মোঃ জাহাঙ্গীর ও মোঃ দিদার সেনাবাহিনীর পোষাকে গাইড করে।
রাতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি পণ্ড করে দেয়ার পর সেনারা ঘরে ঘরেও তল্লাশি চালায়।
যাদের ঘরে তল্লাশি চালানো হয়েছে তারা হলেন- ১. রিবাই মারমা(৭০), পিতাঃ অংজাইরুই মারমা, গ্রামঃ উপর কোলাপাড়া, ২. পাইসাপু মারমা(৪২), পিতাঃ রিবাই মারমা, গ্রামঃ উপর কোলাপাড়া, ৩. উসামং মারমা(৪৫), পিতাঃ রিবাই মারমা, গ্রামঃ উপর কোলাপাড়া, ৪. পাইশিথোয়াই মারমা (২৫), পিতাঃ সুইজাই মারমা, গ্রাম উপর কোলাপাড়া, ৫. অংসাথুই মারমা(৪৫), পিতাঃ ক্যউ মারমা, গ্রামঃ নীচের কোলাপাড়া। তল্লাশির সময় বাড়ির লোকজনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়। এতে ঘুমন্ত শিশুরা ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। সেনারা বাড়ির কাপড়-চোপড়, লেপ তোষক, ওয়ার ড্রোব, শো-কেস, ট্রাঙ্ক, পানির ড্রামসহ যাবতীয় জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। কোলা পাড়া গ্রামের কার্বারী আরেসি মার্মা বলেন, মধ্যরাতে ধর্মীয় কীর্তনে সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
কলমপতি ইউপি’র ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মংথুইপ্রু মারমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর আমরা জাঁকজমপূর্ণভাবে কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান করে থাকি। ধর্ম পালনের অধিকার সবার আছে। কিন্তু এ বছর সেনাবাহিনী ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দিলো না। এটা সত্যিই দুঃজনক। আমরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর এহেন আচরণের নিন্দা জানাই।
এদিকে, গত ২৬ নভেম্বর ২০১৮ সেনাবাহিনী কাউখালী উপজেলার তালুকদার পাড়া, পানছড়ি ও চেলাছড়া এলাকায় এসে রাতে অবস্থান করলে এলাকার জনমনে আতঙ্ক দেখা দেয়। অহেতুক এ ধরনের সেনা তৎপরতা বৃদ্ধিতে এলাকায় জনজীবনে বিরূপ প্রভাব বিরাজ করছে।
——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।