
ঢাকা ।। ‘পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ কর’ এই আহ্বানে রাঙামাটির কলমপতিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত ডজনের অধিক গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিত করার দাবিতে ঢাকায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা শাখা।
শুক্রবার (২৫ মার্চ ২০২২) বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যে পাদদেশে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান পূর্ববর্তীতে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পিসিপি’র ঢাকা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রনেল চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অর্ণব চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নীতি চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নীতি শোভা বলেন, পাহাড়ের গণহত্যা মানেই পাহাড়িদের অস্তিত্বকে ধ্বংস করা।একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক হয়েও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল সেটিকে পাহাড়িদেরকে অনেক কিছু ভাবায়।পাহাড়ে শুধু গণহত্যা নয় প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখল ও নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা ও পাহাড়ে নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনার বিচার এখনো এই রাষ্ট্ করেনি।তিনি অবিলম্বে পাহাড় এবং সমতলে নারীদের নিরাপত্তাসহ পাহাড়ের গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিচার আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করার জন্য আহ্বান জানান।
পিসিপি নেতা শুভাশীষ চাকমা বলেন, বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতার পর থেকে পাহাড়িদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছে। সাংবিধানে জাতিয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে দ্বিতীয় শ্রেণী নাগরিক হিসেবে রাখা হয়েছে। ফলে সমতলের বাঙালিদের কাছে আমাদের জাতিগত পরিচিতি ক্ষেত্রে বিরূপ একটি প্রভাব দেখা দেয়।

তিনি বলেন, আমরা আশির দশকে পাহাড়ে পরিস্থিতি দিকে তাকালে দেখতে পায় এক ভয়াবহ চিত্র। রাষ্ট্রীয় বাহিনী মদদে ও বহিরাগত সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের ওপর যেভাবে হত্যাকান্ড সংঘটিত করা হয়েছিল, পাহাড়িদের জায়গা, জমি ও ভূমি বেদখল করে যেভাবে নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছিল এবং হাজার হাজার পাহাড়ি ভারতে ত্রিপুরায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। পরবর্তীতে পার্বত্য চুক্তি হওয়ার পর পাহাড়িরা তা ফেরৎ পাইনি, তারা এখনো নিজ ভূমিতে পরবাসী হিসেবে মানবেতর জীবন যাবন করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটলার কর্তৃক সংঘটিত কলমপতি, লোগাঙ,লংগুদু, নান্যাচর, ভূষণছড়া, মাল্যা, তাইন্দংসহ ডজনের অধিক গণহত্যার বিচার এখনো হয়নি, হত্যার ঘটনায় শ্বেতপত্র প্রকাশ এখনো করা হয়নি। তার মানে এখানে সুস্পষ্ট যে, সে সকল ঘটনায় সরাসরি রাষ্ট্রীয় মদদে সংঘটিত হয়েছিল এবং তা রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটলার বাস্তবায়ন করেছিল।

তিনি, ৪২ বছরেও কলমপতি গণহত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং পাহাড়ে সংঘটিত সকল ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের সভাপতি রনেল চাকমা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি উদযাপিত হলো অথচ পাহাড়ে প্রতিদিন রক্ত ঝড়ছে। পাহাড়ে সেনা শাসন বৈধতা দিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ও তাদের সৃষ্ট সন্ত্রাসীদের দিয়ে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটানো হচ্ছে। সরকোর রাজনৈতিক দমণের কৌশল হিসেবে বিরোধী শক্তি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটানো হচ্ছে। ইউপিডিএফ-এর নেতা নবায়ন চাকমাকে সেনা হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে, জানুয়ারী পিসিপি সাবেক সভাপতি মিঠুন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছিল এবং মাইকেল চাকমাকে গুম করা হয়েছিল। তার হদিস আমরা এখনো পায়নি।
তিনি,এসবই হত্যাকান্ডের ঘটনার শোকই আমাদের শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন এবং পাহাড়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই যুক্ত হওয়ার জন্য ছাত্র সমাজসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন