খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সিএইচটি নিউজ ডটকম
খাগড়াছড়ি : ‘জাতির অর্ধেক শক্তি নারী সমাজকে জাগ্রত ও সংগঠিত করতে আত্মনিয়োগ করুন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই এগিয়ে নিন’ এই প্রতিপাদ্যের ভিত্তিতে খাগড়াছড়ির সদরে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের ২য় কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি হিসেবে সোনালী চাকমা পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে কাজলী ত্রিপুরা ও নিরুপা চাকমা।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য মেরিনা চাকমা। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলার প্রধান সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য প্রদীপন খীসা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি কনিকা দেওয়ান, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরুপা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা প্রমূখ। সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০৬ জন প্রতিনিধি যোগদান করেন।
সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রামের পহাড়ি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন নারী সংঘের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক সুমনা চাকমা এবং একই সাথে সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সম্মেলনে ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা প্রদীপন খীসা বলেন, শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ি জনগণকে যুগ যুগ ধরে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। আরো অধিকহারে শোষণ-বঞ্চনার শিকার পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারী সমাজ। পাহাড়ি জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করতে হলে নারী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য পাহাড়ি নারী সমাজকে জাগ্রত ও সংগঠিত করতে হলে একটা যুগোপযোগী শক্তিশালী সংগঠন দরকার। আর এই সংগঠনই হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ। এই সংগঠনকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সমাজের মুখপাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সমাজে মদ, জুয়া ও অসামাজিক কার্যকলাপ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে ছাত্র ও যুব সমাজ রসাতলে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, নারী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের এই বেহাল অবস্থায় নারী সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অপরিহার্য।
সোনালী চাকমা বলেন, সমাজকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি পাহাড়ি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও নারী সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব’। তাই, আমাদেরকে একটি সুন্দর সমাজ ও জাতি গড়ে তুলতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সর্বসম্মতিক্রমে ৭দফা মৌলিক দাবি ও ১২ দফা সম্পুরক দাবি গৃহীত হয়। মৌলিক দাবিগুলো হলো:
১. পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে যৌন নিপীড়ন, শোষণ ও বৈষম্য বন্ধের লক্ষ্যে পার্বত্য এলাকা থেকে সেনাবাহিনী ও সেটলারদের প্রত্যাহার করে ভূমি অধিকারসহ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।
২. জাতীয় সংসদের পাহাড়ি নারীদের জন্য ৩টি আসন সংরক্ষণ করতে হবে এবং উক্ত আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। ব্যবসা-বানিজ্যসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে পাহাড়ি নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারী চাকুরীতে তাদের জন্য বিশেষ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।
৪। পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘরে বাইরে চলাফেরায় পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫। নারী পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা তথা নারীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল এবং পাহাড়িদের জাতীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে।
৭। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পরে সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সর্বসম্মতিক্রমে সোনালী চাকমাকে সভাপতি, কাজলী ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক ও নিরুপা চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি শান্তিদেব চাকমা।
—————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।