খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রী ধর্ষকদের দ্রুত সাজা কার্যকরের দাবিতে দুই নারী সংগঠনের মানববন্ধন

0

উপজেলা-জেলায় লাঠি ও ঝাড়ু মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা


খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দ্রুত সাজা কার্যকরের দাবিতে খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গীস্কয়ারে মানববন্ধন করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।

মানববন্ধন থেকে ধর্ষকের দ্রুত সাজা কার্যকর এবং পলাতক ধর্ষকদের গ্রেফতার ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে উপজেলা-জেলায় পর্যায়ক্রমে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিলের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।   

আজ সোমবার (২১ জুলাই ২০২৫) সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি কণিকা দেওয়া, হিল উইমেন্স  ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা, ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি ইউনিটের সংগঠক লালন চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সহসভাপতি অনিমেষ চাকমা।


কণিকা দেওয়ান বলেন, পাহাড়ে ধর্ষনের ঘটনার বিচার নিয়ে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। বরং তারাই ধর্ষকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত। আজ পর্যন্ত শত শত নারী-শিশু, মা-বোন ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কোন ঘটনারই আমরা সুষ্ঠু বিচার পাইনি। এতেই প্রমাণ হয় যে, রাষ্ট্রই ধর্ষকের পক্ষাবলম্বন করছে। যার কারণে ভাইবোনছড়ায় সহপাঠী ধর্ষণের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সেনাবাহিনী হামলা ও লাঠিচার্জ করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার নারী নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেন একটি  ধর্ষকদের দেশে পরিণত হতে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ধর্ষকদের উল্লাস চলছে। একটি স্বাধীন দেশে এমন কর্মকাণ্ডকে আমরা তীব্র ঘৃণা জানাই।

তিনি ভাইবোনছড়ায় স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে জড়িত সকলকে গ্রেফতারপূর্বক সর্বোচ্চ সাজা প্রদান এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।


এন্টি চাকমা বলেন, ভাইবোনছড়ায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা বিএনপি। যার কারণে পলাতক ধর্ষকদের এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না। ধর্ষকরা প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ালেও প্রশাসন তাদের খুঁজে পায় না। তিনি এই ধর্ষণ ঘটনায় বিএনপি’র যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং বলেন তারা বিভিন্নভাবে এ ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে রাখতে ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতার কথা তুলে ধরে বলেন, এ যাবত যত পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কোন ঘটনার বিচার হয়নি, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়নি। ফলে বার বার এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত ন্যায় বিচার হচ্ছে না। পাহাড়ি নারী ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্টের ওপর রাষ্ট্রীয় বিশেষ সংস্থার গোপন নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে একই অপরাধ সংঘটিত করে থাকে। ফলে পাহাড়ের নারীদের প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

তিনি অতি দ্রুত ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিতের দাবি জানান।


অনিমেষ চাকমা বলেন, সারা দেশ ব্যাপী ধর্ষনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, তবে পাহাড়ে এ ধর্ষণের ঘটনাগুলো করা হচ্ছে জাতিগত নিপীড়নকে জোরদার করতে। ফলে পাহাড়ি নারীদের আজ কোথাও নিরাপত্তা নেই, একইভাবে দেশের নারীরাও নিরাপদ নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় না, উল্টো ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে হামলা চালায়। গত ১৭ জুন ভাইবোনছড়া ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার তারই উদাহরণ।

তিনি ভাইবোনছড়ায় স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতরা সবাই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত উল্লেখ করে বলেন, বিভিন্ন জাতীয় মিডিয়ায় স্পষ্টভাবে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় তুলে ধরলেও বিএনপি এখনো দায় স্বীকার করেনি, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বরং বিভিন্নভাবে তারা এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে নানা চক্রান্ত করছে। যার কারেণে পলাতক দুই আসামিকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করেনি। বিএনপির রাজনীতি করলেই কি তাহলে ধর্ষণ জায়েজ হয়ে যাবে? ধর্ষকরা বিচারের আওতার বাইরে থাকবে?


অনিমেষ চাকমা বলেন, ধর্ষক যেই হোক সে ধর্ষক। তার অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে। কিন্তু বিএনপি তা চাচ্ছে না। তারা ঘটনাকে আড়াল করতে কিছু পাহাড়ি দালালকে ব্যবহার করছে।

জুলই গণঅভ্যুত্থানের পরও পাহাড়ে আগের মতোই শাসন-শোষণ জারি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বতী সরকারও আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই পাহাড়ে সেনাশাসন চাপিয়ে দিয়ে রেখেছে। পাহাড়িদের সাথে চরমভাবে অন্যায় করছে। আগের সরকারগুলোর মতো এ সরকারও পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। রাজনৈতিক অধিকারের কথা বললেই বিচ্ছিন্নতার ট্যাগ লাগিয়ে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। তিনি ভাইবোনছড়া ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সকল পলাতক ধর্ষকদের গ্রেফতারপূর্বক সকল ধর্ষকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।

মানববন্ধন থেকে ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্র্রেণির ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে জড়িতদের দ্রুত সাজা কার্যকর করা এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে সপ্তাহব্যাপী পর্যায়ক্রমে উপজেলা-জেলায় লাঠি ও ঝাড়ু মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।

মানববন্ধন শেষে মিছিল সহকারে স্বনির্ভরে গিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More