খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ ইউপিডিএফের

0

তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, খুন ও বিহার-ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

এছাড়া দলটি ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষিত তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ৭২ ঘন্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছে।

আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪) সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের সহসভাপতি নতুন কুমার চাকমা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি হামলাকে বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, গতকাল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সদরে বাস স্টেশনের বটতলা লারমা স্কোয়ারে মিছিল সহকারে এসে সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং দোকান-ঘরবাড়িসহ একটি বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করে।

দীঘিনালায় দোকানপাট-ঘরবাড়ি আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় সেটলাররা।

এ সময় সেনা-সেটলারদের হামলায় গুরুতর আহত ধন রঞ্জন চাকমা (৫০) খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন আহত হন।

অন্যদিকে, দীঘিনালার উক্ত হামলা-অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে রাতে খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙহিয়া, উপালি পাড়া ও স্বনির্ভর এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে সেনাবাহিনী নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এতে জুনান চাকমা (২২) ও রুবেল ত্রিপুরা (২৪) নামে দু’জন নিহত হন এবং ১২ জনের অধিক গুরুতর আহত হন।

 দীঘিনালায় হামলায় নিহত ধন রঞ্জন চাকমা। তাকে সেনাবাহিনী সদস্যরা ধরে নিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।


আহতদের মধ্যে গুরুতর জখম ৭ জনকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী ৯ জন ছাত্র ও সাধারণ লোককে আটক করে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আহত অবস্থায় থানায় হস্তান্তর করেছে।

এদিকে, আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটিতে ‘সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের’ উদ্যোগে দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হলে সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়।

সেটলারদের এই পরিকল্পিত হামলায় হতাহতের খবর পাওয়া গেছে, তবে তার সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি।

 রাঙামাটি শহরে সেটলারদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চিত্র

বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পাহাড়িদের ওপর এ ধরনের বর্বর হামলা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তার সরকার এ হামলার দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার কোন বিচার আজও হয়নি। হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এমন হামলা পাহাড়িদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।

খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত রুবেল ত্রিপুরা।

ইউপিডিএফ নেতা অবিলম্বে পাহাড়িদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেনা-সেটলারদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আহত-নিহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের  জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার আহুত তিন পার্বত্য জেলায় আগামীকাল (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে ৭২ ঘন্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানান এবং এই কর্মসূচি সফল করতে নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More