খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
রবিবার (২৫ জুন ২০১৭) সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি জেলা সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হল রুমে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়িজেলাধীন বিভিন্ন উপজেলা থেকে দেড়শত জন কৃতি শিক্ষার্থীসহ আড়াই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে অভিভাবক, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সামাজিক, রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ও পিসিপি জেলা উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান তিন পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা। বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাবেক সভাপতি মাইকেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা। আমন্ত্রিত অথিতিদের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সাবেক গণ পরিষদের নেতা ও পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিম্বিসার খীসা প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শুরুতে পিসিপি’র দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এবং লংগুদুতে সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে হত্যা ও তিন পার্বত্য জেলাসহ সারাদেশের পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা কৃতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের দিনটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়, কারণ এখানে বহু মেধাবীর সম্মিলন ঘটেছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা পরিবর্তনের জন্য ছাত্র সমাজকে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় চাপসহ সকল প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে হবে।
তারা আরো বলেন, সবকিছু নিয়ম-আইন মেনে হয় না। শাসকগোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় এ নিয়ম-আইন বানায়। একাত্তরও নিয়ম মেনে আসেনি উল্লেখ করে বলেন, আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার, ভিটেমাটি রক্ষার এবং মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষার জন্য যদি শাসকশ্রেণির তৈরী করা এসব নিয়ম-আইন ভাঙতেও হয় তাহলে আমাদেরকেও তা ভাঙতে হবে। এর জন্য ছাত্র সমাজকে সর্বদা প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানান বক্তারা।
বক্তারা আরো বলেন, কেবল সার্টিফিকেট অর্জন মূখ্য নয়, সমাজ পরিবর্তনের, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ভূমিকা রাখতে না পারলে তার কোন মূল্য থাকে না। যে শিক্ষাব্যবস্থা দেশে বিদ্যমান রয়েছে তা একজন ছাত্রকে ব্যক্তি কেন্দ্রীকতার দিকে ধাবিত করে।
বক্তারা বলেন, অর্জিত বিদ্যাকে শুধু আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে নয়, অধিকার আদায়ের শাণিত হাতিয়ারে পরিণত করতে হবে। যে কোন জাতীয় দুর্দিনে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বক্তারা কৃতি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে কৃতি শিক্ষার্থীদের হাতে ফুল এবং বই তুলে দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা পর্ব শেষে কৃতি শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিরা তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। এরপর প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের শিল্পীরা বিপ্লবী গান ও নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষ হয়।
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।