খাগড়াছড়িতে কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহে চরম বিপন্ন হয়ে পড়েছে জনজীবন

0
40

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
1422579_505837919522268_7833677638186359669_nখাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় গত কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহে জেলার ৯টি থানার জনজীবন হয়ে পড়েছে চরম বিপন্ন । দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রচন্ড গরমে দিশাহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। গরমের তাপ থেকে রেহাই পেতে খোলা আকাশের নীচে, ঘরের বারান্দায় ও গাছ তলায় হালকা ঠান্ডা  হাওয়ার পরশ নিতে এসেও রেহাই মিলছে না। এই  তীব্র তাপদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে  বিদ্যুতের লোডশেডিং।

বিভিন্ন প্রজাতির গৃহপালিত পশুদেরও ভিন্ন জায়গায় হাটু পানিতে গা ভিজিয়ে নিতে দেখা গেছে । তাই মানবকুলের পাশাপাশি পশু-পাখিদের জনজীবনেও নেমে এসছে অস্থিরতা । বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষকরাও আছে মহা বিপাকে । অসুস্থ হয়ে পড়লে দায়বদ্ধতা শিক্ষদেরই নিতে হবে । অসহনীয় গরম আর প্রচন্ড তাপমাত্রার কারনে দিনের বেলায় প্রয়াজন ছাড়া ঘর হতে বের হচ্ছে না কেউ । প্রখর রোদে’র তাই দিন-দুপুরে রাস্তা-ঘাট প্রায়ই থাকে জনশুন্য । তাছাড়া বিদ্যুতের লোড-শেডিংয়ের কারনে আরো বড় বিপাকে আছেন নিরাপত্তা কাজে দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন বাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সর্বসাধারন ।

বিভিন্ন এলাকার পানির অভাবে মরুর মত হাহাকারে পরিনত হয়েছে পাহড়ের সর্বত্র প্রত্যন্ত অঞল । চৈত্র ও বৈশাখের এই প্রচন্ড খরায় উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় লেগেছে পানির জন্য হাহাকার । যা বিগত দিনের ইতিহাসকে হার মানিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকেরই মনে করছেন ।

১নং লোগাং ইউপি’র ফাতেমা নগরবাসীরা চেংগী নদী পাড়ি দিয়ে ঝর্না থেকে ঝড়ে পড়া এক ফোটা, দু’ফোটা পানি নিতে কলসী নিয়ে ভীড় জমাচ্ছে ৩নং পানছড়ি এলাকায় চেংগী নদীর পাড়ে । যা নিজ চোখে না দেখলে সম্পুর্ন অবিশ্বাস্য ও কাল্পনিক । অথচ এই পানি পান করা কতটুকু নিরাপদ তারা সে বিষয়ে কিছু জানেন না ।

একদিকে পানির হাহাকার অন্যদিকে প্রচন্ড তাপদাহ অপর দিকে বিদ্যুতের লোড-শেডিংয়ের ত্রিমুখী সমস্যায় সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন রোগব্যাধি । প্রতিনিয়ত হাসপাতাল মুখী হচ্ছে নবজাতক থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরাও । ডায়েরিয়া, বমি, মাথা ব্যথা, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের মতো জটিল রোগীর সংখ্যা জেলা শহরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা যায় ।

খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সোহারাব হোসেন জানান, যেখানে পানি অভাবে কথা শুনি বা টিউওয়েলে’র আবেদন করার ব্যক্তিদের ন্যুনতম এলাকা বেদে ১টি করে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে । প্রচন্ড গরমের পুরো দেশ নাকাল হওয়ার ফলে সেটি এখানেও প্রভাব পড়েছে । সম্মিল্লিত প্রচেষ্টায় সকলকেই মোকাবেলা করতে হবে ।

খাগড়াছড়ি’র সিভিল সার্জন ডাঃ নারায়ন চন্দ্র দাশ জানান, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে । বর্তমানেও আধুনিক সদর হাসপাতালে ১০/১২জনকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে । এই প্রচন্ড গরমে হিট ষ্ট্রোক ও নিউমোনিয়া রোগের প্রবনতা বেশী দেখা দেয় ।

আবহাওয়া অভিজ্ঞ মহলের ধারনা মতে, ঝুমে আগুন ও আবাধে বনজ সম্পদ উজাড় করার কারনেই আজ প্রকৃতির আবহাওয়ার এই প্রতিকুলতা । সবাইকে সচেতনতা হয়ে এসব বনাঞ্চল ধ্বংস রোধ করতে পারলেই হয়তো আগামী প্রজম্ম অনুকুল আবহাওয়ায় বাস করতে পারবে ।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.