সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে
খাগড়াছড়িতে পিসিপি’র সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ সফলভাবে পালিত
আটককৃতদের মুক্তি না দিলে আরো কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
খাগড়াছড়ি : বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র ডাকে আজ বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ সেনা সদস্যদের গুলি বর্ষণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, নিরীহ লোকজন-সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার, মারধরের পরও সফলভাবে পালিত হয়েছে।
আটক নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সংগঠনটি এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
অবরোধ চলাকালে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সেনা সদস্যরা আলুটিলা সেগুন বাগান এলাকায় পিকেটারদের লক্ষ্য করে ৪ রাউন্ড গুলি চালায়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। পিকেটাররা নিরাপদে সরে যেতে সক্ষম হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেনা-পুলিশ আলুটিলা পুর্নবাসন এলাকায় স্থানীয় চা দোকান থেকে ৪ জন নিরীহ সাধারণ ছাত্রকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন রুবেল ত্রিপুরা(১৬) পিতা- নুনুমনি ত্রিপুরা, সনজিত ত্রিপুরা(১৬) পিতা- বিশ্বকান্তি ত্রিপুরা, শ্যামল ত্রিপুরা(১৭) পিতা- দেব ত্রিপুরা, নিরন ত্রিপুরা(১৭) পিতা- কল্প ত্রিপুরা। তারা সবাই একই গ্রামের বাসিন্দা।
এছাড়া মহালছড়িতে রিপন চাকমা(৪০) পিতা-জোসনা বিকাশ চাকমা, গ্রাম-মেজর পাড়া, অমরচান চাকমা(৪০) পিতা- লিয়ন্তর চাকমা গ্রাম- রাম সুপাড়ি পাড়া, রতন চাকমা(৪৫) পিতা সাধন বিলাশ চাকমা গ্রাম-ফরেস্ট অফিস– নামে এ তিন জন দেকানদারকে সেনাবাহিনী বিনা কারণে বেদম মারধর করে আহত করে।
আজকের অবরোধ সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বলবৎ থাকার কথা থাকলেও, বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে ধর্মীয় অনুষ্ঠান থাকায় বিশেষ কারণে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা আগে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা আজকের সড়ক অবরোধে যে সকল স্থানে কর্মী-সমর্থকগণ প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা প্রদান করেছেন সংগঠনের পক্ষ হতে তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতার সাথে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সেনা-পুলিশ দিন দিন ব্যাপক আকারে ধরপাকড়, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার, উন্নয়নের নামে ভুমি বেদখল, সাম্প্রদায়িক উষ্কানী দিয়ে চলেছে। এতে বিভ্রান্তির শিকার হয়ে একশ্রেণীর উগ্র জাতীয়তাবাদী বাঙালি বিশেষ করে সেটলাররা এদের গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পিসিপি নীতিগতভাবে এ ধরনের ঘৃণ্য কার্যকলাপের তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং সমালোচনা করে।
তিনি সেনা-পুলিশের এই সকল সাম্প্রদায়িক ও জোরজবরদস্তিমূলক কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তিনি পিসিপি’র তিন নেতাসহ আজকে যারা সেনা পুলিশের হামলা ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে, আটককৃত সবার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় পিসিপি আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলে তিনি হঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমাসহ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আটককৃত নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গতকাল ২ নভেম্বর খাগড়াছড়িস্থ ইউপিডিএফ কার্যালয়ে পিসিপি’র আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন শেষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিনয়ন চাকমা ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিল চাকমাকে সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে মারধর করে এবং পরে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। এরই প্রতিবাদে এবং আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে পিসিপি তাৎক্ষণিকভাবে এই সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়।
——————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।