খাগড়াছড়িতে পিসিপি নেতা বিপুল চাকমার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি পেশ
খাগড়াছড়ি : বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে। আজ সোমবার (৩১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় পিসিপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা এবং কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমার নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক অফিসে স্মারকলিপি দিতে যায়। এ সময় গুইমারা ইউপি নির্বাচনের কাজে থাকায় জেলা প্রশাসকের পক্ষে উক্ত স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ টি এম কাউসার হোসেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিসিপি প্রতিনিধি দলকে কোন আশার বাণী শোনাতে ব্যর্থ হন। গুইমারা থেকে নির্বাচনী কাজে ফিরলে স্মারকলিপি যথারীতি জেলা প্রশাসকের নিকট হস্তান্তর করবেন বলে তিনি জানান। এতে পিসিপি প্রতিনিধি দল সন্তুষ্ট হতে পারে নি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমাকে মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আগে নিঃশর্তে মুক্তি দেয়াই ছিল পিসিপি’র দাবি। কিন্তু প্রশাসন নানা গড়িমসি করে তাকে অত্যন্ত অমানবিকভাবে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। পিসিপি আগামী ২ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিপুল চাকমাসহ রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দীদের মুক্তি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দমনমূলক ১১দফা নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা’র মুক্তির দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে খাগড়াছড়ি সদরে বিপুল সংখ্যক সেনা, বিজিবি, দাঙ্গা পুলিশ পুরোদস্তুর রণ সাজে সজ্জিত হয়ে রাজপথে টহল দেয়। গোয়েন্দাদের বিচরণ ছিল সর্বত্র। নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের এ ধরনের সমর সজ্জা দেখে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা সরকার-প্রশাসনের সমালোচনা করে প্রশ্ন তোলেন, এরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে কাশ্মির বানাতে চায় নাকি। আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত থাকায় তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের নিকট অপরাধী মনে করছেন বলেও জানান। জনগণ যেভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে তাতে সরকার দলীয় লোকদের বেঈমান বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা শুরু হলে, তিনিও ঐ তালিকায় পড়বেন বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। বিপুল চাকমাকে গ্রেফতার ও তার মায়ের মৃত্যুর পেছনে পুলিশের ভূমিকা দায়ী করেন এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে তা কখনই মেনে পারছেন না বলে জানান। আজকে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল নিয়ে পথে-ঘাটে সর্বত্র বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসককে দেয়া পিসিপি’র স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, গত ২৩ অক্টোবর উন্নত চিকিৎসার্থে গুরুতর অসুস্থ মা’কে নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম রওনা হবার পথে পানছড়ি থানার ওসি পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা’কে রাস্তায় থামিয়ে আটক করেন। অসুস্থ মায়ের সামনে থেকে থানার ওসি অত্যন্ত অশোভন পন্থায় গাড়ি থেকে নামিয়ে অনেকটা দাগী অপরাধীর মত টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান। অসুস্থ মায়ের সামনে গালিগালাজ না করতে অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও ওসি তাতে কর্ণপাত করেননি। ১৩টি ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা মামলায় আসামি বানিয়ে থানায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ঘটনার দিন ভোর রাতে (যা আন্তর্জাতিক সময় অনুসারে ২৪ অক্টোবর) আমাদের সহযোদ্ধা বিপুল চাকমা’র মা মারা যান। ২৫ অক্টোবর মায়ের দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ৭ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হলেও নানান আইনী জটিলতা দেখিয়ে তাকে দুপুর দেড় টার দিকে কারাগার থেকে বের করা হয়। একজন দাগী অপরাধীর মত হাতকড়া, ডাণ্ডাবেড়ি দিয়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে কড়া পুলিশ প্রহরায় বিকেল তিনটার দিকে বিপুল চাকমাকে শ্মশানে যেতে দেয়া হয়। দৃশ্যটি ছিল একই সাথে অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ও ক্রোধ উদ্রেককারী। দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র-জনতা এর প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছে। সংগঠনের নেতা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা’র প্রতি যে অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে, তার জন্য আমরা যারপরনাই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। পুলিশ এ ধরনের আচরণের মাধ্যমে শুধু ব্যক্তি বিপুল চাকমা’কে নয় আমাদের গোটা সংগঠনকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজকে তথা সারাদেশের প্রতিবাদী ছাত্র সমাজকে অসম্মান ও অপদস্থ করেছে বলে আমরা ধরে নিয়েছি।
আমরা মনেকরি, বিপুল চাকমার সাথে পুলিশের অমানবিক আচরণের আঘাত সইতে না পেরে তার মা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন। পানছড়ি থানার ওসি ও প্রশাসন এ ঘটনার দায় এড়াতে পারবেনা।
১ নভেম্বর মঙ্গলবার বিপুল চাকমার মায়ের শ্রাদ্ধক্রিয়ার দিন ধার্য হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে মুক্ত নাগরিক হিসেবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিপুল চাকমা’র মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সহ তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
———————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।