খাগড়াছড়িতে বৈ-সা-বি উৎসবের প্রাক্কালে সেনা-পুলিশের ধরপাকড় অভিযান, জনমনে আতঙ্ক
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈ-সা-বি (বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু) সমাগত। বৈ-সা-বি’কে ঘিরে পাহাড়িদের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু খাগড়াছড়ি শহরের পরিস্থিতি এখন আর সেভাবে নেই। জনমনে একটা আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। শহরে সেনা-পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে। চালানো হচ্ছে ধরপাকড় অভিযান। লোকজন ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছে।
গত ২৩ মার্চ ভেজাল পণ্য সরবরাহ করে টাকা হাতিয়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে জনৈক এক বাঙালি পণ্য সরবরাহকারীর সাথে স্বনির্ভর বাজারের এক দোকানদারের মধ্যেকার অনাকাঙ্খিত ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ স্বনির্ভর বাজার কমিটির সভাপতি, সম্পাদক সহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে ১৮০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এরপর থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ নানাভাবে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও হয়রানি করছে। সেনা-পুলিশের ধরপাকড়, হয়রানির ভয়ে স্বনির্ভর বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষের গমনাগমন কমে গেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর-পাকড় অভিযানের পাশাপাশি রাজনৈতিক কোন সভা-সমাবেশও করতে দিচ্ছে না প্রশাসন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ দিয়ে সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিঙে বাধা প্রদান ও ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। গত ৪ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষার সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের দাবিতে মিছিল করতে গেলে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমাকে আটক করা হয়েছে। এরপর গতকাল ৫ এপ্রিল গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাতে গেলে সেখানেও সেনা-পুলিশ বাধা দেয়। তারা খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কিরণ মারমাকেও অপদস্ত করে। খাগড়াছড়ি শহরে বর্তমানে পুলিশের পাশাপাশি সেনা টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া র্যাব সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে। ফলে শহর এলাকায় বসবাসকারী পাহাড়িদের মধ্যে একটা আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বৈ-সা-বি উৎসব কতটুকু নির্বিঘ্ন হবে তা নিয়ে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি সিএইচটিনিউজকে বলেন, বৈ-সা-বি উৎসব পাহাড়িদের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব। পাহাড়িরা যাতে এই উৎসব নিরাপদে ও আনন্দঘন পরিবেশ উদযাপন করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। কিন্তু যদি এভাবে ধরপাকড় চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয় তাহলে মানুষ আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব পালন করতে পারবে না। ফলে প্রশাসনের প্রতি মানুষের ভরসার জায়গা কমে যাবে।
তিনি সবাই যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে বৈ-সা-বি উৎসবে সামিল হতে পারে তার জন্য ধরপাকড় অভিযান বন্ধ করে স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে, খাগড়াছড়ি শহর ছাড়াও দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা সহ বিভিন্ন জায়গায় একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
———————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।