খাগড়াছড়িতে হয়ে গেলো গণপিকনিক

0
5

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
OLYMPUS DIGITAL CAMERA“ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করুন” এই শ্লোগানে খাগড়াছড়িতে আজ ৪ এপ্রিল শুক্রবার হয়ে গেলো গণপিকনিক। পিকনিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে জনপ্রতিনিধি, মুরুব্বী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ছাত্র-যুবক ও নারীরা অংশগ্রহণ করেন।

খাগড়াছড়ি সদরের গাছবানে শুক্রবার দুপুরে গণপিকনিক আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক তৃপ্তিময় চাকমার সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা, খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট মুরুব্বী কিরণ মারমা, বিশিষ্ট মুরুব্বী প্রার্থনা কুমার ত্রিপুরা ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)এর কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা। এছাড়া খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, দীঘিনালা উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নবকমল চাকমা, লক্ষীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক মধু মঙ্গল চাকমা সহ নান্যাচর, কাউখালী ও লক্ষীছড়ি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন ধীমান খীসা।OLYMPUS DIGITAL CAMERA

সভায় অনন্ত বিহারী খীসা তার বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ভয়াবহ দুর্দিন চলছে। বলা যায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। এ দূরাবস্থা শুধু আজকের নয়, দীর্ঘদিন যাবত চলছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার জুম্মদের উচ্ছেদ করতে চায়। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই নীলনক্সা বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইংরেজীতে যাকে এথনিক ক্লিনজিং বলা হয়। এ দুর্দিনে বসে থাকার আর কোন অবস্থা নেই। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন যাবত নিপীড়ন-নির্যাতন চললেও জুম্মদের মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। অনেকে নির্বিকার রয়েছেন। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষিত, মুরুব্বী শ্রেণীর লোকেরা এসব বিষয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকদের বুঝানোর দরকার হলেও তারা সে দায়িত্ব পালন করছে না। বরং অনেকে শত্রুপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারের নীলনক্সা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি জুম্ম উচ্ছেদের নীল নক্সা বাস্তবায়ন করছে। এসব দলে যোগ দেওয়া মানেই তাদেরকে নীলনক্সা বাস্তবায়নের কাজে সহযোগিতা দেয়া।

OLYMPUS DIGITAL CAMERAতিনি গণপিকনিকের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে জুম্মদের মধ্যে ঐক্য, সংহতি জোরদার করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কিরণ মারমা বলেন, নিজেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে জাতিগত ঐক্যকে সুসংহত করতে হবে। আমরা বিভিন্ন সময় নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। ষড়যন্ত্রের কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদেরকে পরাজিত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে, প্রতিটি পাড়া-গ্রামে স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী তৈরির চেষ্টা চলছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব কাজ করছে। সামাজিকভাবে এসব স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠীকে বয়কট করতে হবে। আত্মঘাতিমুলক কাজ ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলো শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক যুগযুগ ধরে নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়ে আসছে। ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন করা হচ্ছে, অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত পাহাড়ি চাকুরিজীবীদের যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োগ দেয়া হতো তাহলে আমরা অনেক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতাম।  তিনি বলেন, শাসক শ্রেণী ‘ভাগ করো শাসন করো’ নীত প্রয়োগ করে কাউকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে আমাদের বিভক্ত রাখার চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয় কুলাঙ্গার ও বেঈমানদের চিনে রাখতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত অচিরেই বন্ধ হওয়া দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে। সঠিকভাবে আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য সঠিক কর্মসূচির প্রয়োজন। ইউপিডিএফ সঠিক কর্মসূচির ভিত্তিতেই আন্দোলন পরিচালনা করছে দাবি করে তিনি ইউপিডিএফের আন্দোলনে একাত্ম হওয়ার আহ্বান জানান।

আলোচনা সভা শেষে প্রীতিভোজ ও  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.