খাগড়াছড়ি॥ সেনা-মদদপুষ্ট জেএসএস সংস্কারবাদীরা খাগড়াছড়ির বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে জোরপূর্বক চাঁদা দাবি করেছে। গত শুক্রবার হরিনাথ পাড়ায় সংস্কারবাদীদের সশস্ত্র গ্রুপের কমান্ডার বিধান চাকমা খাগড়াছড়ি উপজেলার পাহাড়ি অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি গ্রামের মুরুব্বীদের ডেকে এই চাঁদা দাবি করেন।
উক্ত মিটিঙে উপস্থিত কয়েকজন মুরুব্বী সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘আমরা মনে করেছি মিটিঙে আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। জাতির যে করুণ অবস্থা, ভ্রাতৃঘাতি হানাহানিতে সমাজের যে বিপর্যস্ত অবস্থা সে সম্পর্কে কথা বলা হবে, সংকট উত্তরণের জন্য দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। কিন্তু না, সংস্কারবাদী নেতা বিধান বাবু সে বিষয়ে কোন কথা বলেননি, তিনি তার ৬-৭ মিনিটের বক্তব্যে আমাদের কাছ থেকে কেবল টাকাই দাবি করলেন।’
তাদের তথ্য মতে, উত্তর ও দক্ষিণ খবংপুজ্জ্যা এলাকাকে ২ লক্ষ টাকা, উপালী পাড়াবাসীকে দেড় লক্ষ টাকা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া অনন্ত মাষ্টার পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের জন্যও লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা ধার্য করে দেয়া হয়েছে।
মিটিঙ চলাকালে শক্তি প্রদর্শন করে মুরুব্বীদের উপর মনস্তাত্বিক প্রভাব সৃষ্টির জন্য সংস্কারবাদীদের ২৬ জন সশস্ত্র সদস্যকে পাহারায় রাখা হয় বলে মুরুব্বীরা জানিয়েছেন।
মিটিঙে পৌরসভার কমিশনার অতিশ চাকমাসহ উত্তর ও দক্ষিণ খবংপুজ্জ্যা, নারানহিয়া, অনন্ত মাষ্টার পাড়া, উপালি পাড়া, মহাজন পাড়া, মিলনপুর, কল্যাণপুর, মধুপুর, নিউজিল্যান্ড, কমলছড়ি ও গুরগুজ্জ্যাছড়ি এলাকা থেকে কয়েকজন মুরুব্বীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরো অনেক গ্রাম থেকে উক্ত মিটিঙে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সে সেব গ্রাম থেকে কেউ যাননি।
মিটিঙে উপস্থিত নারানহিয়ার এক মুরুব্বী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা কি তাদের পকেট ভারী করে দেয়ার জন্য কষ্ট করে আয় উপার্জন করছি। এই দুর্মূল্যের বাজারে যেখানে আমাদের পরিবার পরিজনকে ভরণ পোষণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, দিনে এনে দিনে খাওয়ার মতো অবস্থা, সেখানে তাদেরকে এত টাকা কোথা থেকে দেবো?’
আর একজন মুরুব্বী ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘কী জন্য তাদেরকে টাকা দেবো? তারা তো জনগণের জন্য কোন কাজই করে না। আন্দোলন সংগ্রাম থেকে তারা বহু দূরে। তারা কোনদিন আন্দোলন করবে বলেও মনে হয় না। তাহলে কী জন্য তাদের টাকা দরকার?’
তিনি মনে করেন সংস্কারবাদীদেরকে চাঁদা দেয়া হলে তারা সেই টাকা আমাদের স্বজাতির পক্ষে নয়, বরং বিপক্ষে ব্যবহার করবে। ‘তারা সেই টাকা দিয়ে অস্ত্র ও গুলি কিনবে, আর সেই অস্ত্র ও গুলি দিয়ে তাদের জাত-ভাইদের হত্যা করবে। কাজেই সংস্কারবাদীদেরকে টাকা দেয়ার অর্থ হলো নিজ ভাইকে হত্যার কাজে তাদেরকে সহায়তা করা। একজন সুস্থ মস্তিষ্ক ও বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ এই জঘন্য কাজ কখনই করতে পারে না।’
তিনি বলেন সংঘাত বন্ধ করতে চাইলে সংস্কারবাদীদেরকে সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। তাদেরকে আর্থিকভাবে এমনকি মানসিকভাবেও যদি সমর্থন বা সহযোগিতা করা হয় তাহলে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হবে।
সংস্কারবাদীদের এক নেতা এস.কে ত্রিপুরা স্বীকার করেন তারা জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনবেন। গত কয়েক দিন আগে এক চালান অস্ত্র আসার কথা ছিল, কিন্তু সেই অস্ত্রের চালানসহ তাদের দু’জন কর্মীসহ মিজোরামে ধরা পড়ে। এরা এখনো মিজোরামের জেলে আটকা রয়েছে।
ওই অস্ত্রের চালানো ১২টি অত্যাধুনক অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ছিল বলে তিনি জানান।
সংস্কারবাদী নেতা আরো বলেন, তারা বর্তমানে চরম অর্থ সংকটে ভুগছেন। চাঁদা সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে, তাই জনগণের কাছ থেকে তারা চাঁদা চাইছেন। জনগণের কাছ থেকে চাঁদা না পেলে তারা তাদের কর্মী বাহিনীকে ধরে রাখতে পারবেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জনগণের দেয়া টাকায় অস্ত্র কিনে তারা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কিংবা নিরস্ত্র কোন ধরনের আন্দোলন করবেন না, তারা কেবল ইউপিডিএফ ও তাদের সমর্থকদের খুন করতে অস্ত্র কিনবেন।
ইউপিডিএফ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কেন খুন করবেন, তারা তো জনগণের অধিকারের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন, জেলজুলুম খাটছেন, বহু ত্যাগ স্বীকার করছেন, এমন প্রশ্ন করা হলে সংস্কারবাদী নেতা কোন উত্তর না দিয়ে চুপ হয়ে যান।
———————-
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।