খাগড়াছড়ি শহরে সেটলার হামলার ১১ বছর

0
সেটলারদের লাগিয়ে দেওয়া আগুনে পুড়ে যাচ্ছে পাহাড়িদের একটি বাড়ি। ফাইল ছবি

খাগড়াছড়ি ।। আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খাগড়াছড়ি শহরে বাঙালি সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার হামলার ১১ বছর পূর্ণ হলো।

২০১০ সালের এই দিনে (২৩ ফেব্রুয়ারি) সেটলার বাঙালিরা স্থানীয় সামরিক বেসামরিক প্রশাসনের মদদে পরিকল্পিতভাবে খাগড়াছড়ি শহরের মহাজন পাড়া, কলেজ পাড়া, মিলনপুর, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা, মধুপুর ও সাতভেইয়া পাড়ায় পাহাড়ি বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালায়। এতে পাহাড়িদের ৬০টির অধিক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

সাজেকে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে সেদিন ইউপিডিএফের ডাকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলছিলো। দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরের নারিকেল বাগান এলাকায় অবরোধের সমর্থনে বের করা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় সেটলার বাঙালিরা। মিছিলটি শাপলা চত্ত্বর থেকে মহাজন পাড়ার দিকে আসতে থাকলে পেছন থেকে তারা আক্রমণ করে। এতে মিছিলে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন আহত হয়।

এর পরপরই সেটলাররা নারিকেল বাগান এলাকায় পাহাড়িদের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করে দেয়। পরবর্তীতে তারা মহাজন পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট সংঘটিত করে।

ফাইল ছবি

সেটলাররা যখন পাহাড়িদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ করছিলো তখন পুলিশ ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। তারা হামলাকারীদের বাধা দেয়ার কোন চেষ্টা করেনি। ঘটনা কাভার করার জন্য দায়িত্ব পালনরত এনটিভির সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদ, দেশ টিভির সাংবাদিক মংসা প্রু মারমা ও সাংবাদিক দিলীপ চৌধুরীকেও সেটলাররা মারধর করে। কিন্তু এতকিছুর পরও পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের রাজত্ব শেষ হওয়ার পরই কেবল প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। এর মধ্যেও সেটলাররা পাহাড়ি গ্রামে হামলা অব্যাহত রাখে। তারা সাতভেইয়া পাড়ায় ঢুকে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ফলে সেদিন রাতে জারি করা হয় কারফিউ। পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে খবংপুজ্যাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ডাক্তার, শিক্ষকসহ ৬০ জনের অধিক নিরীহ গ্রামবাসীকে আটক করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী। খবংপু্জ্জ্যায় ২ জনকে মারধর করে আধমরা করে ফেলে রেখে যায়। শহরে মিছিল-মিটিঙের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

এছাড়া নিন্দার ভয়ে যৌথ বাহিনী হামলাকারী কয়েকজন সেটলারকেও আটক করে। যাদের কাছ থেকে পাহাড়িদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়েছিলো।

কিন্তু ১১ বছরেও এই সাম্প্রদায়িক হামলার আসল মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তারা এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তেই।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More