খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে সেটলারদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা কলেজে প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কলেজ প্রশাসনও তাদের ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে সাধারণ পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা ক্লাশের ফাঁকে কলেজ ক্যাম্পাসে বসে গল্পগুজব, আড্ডা দেওয়া, গ্রুপ স্টাডি ও ছোটখাট পাঠচক্র করতে গেলে সেটলাররা বাধা দেয় এবং হামলা ও মারধর করে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চালায়।
গতকাল শনিবার (২৭ জানুয়ারি) কয়েকজন পাহাড়ি ছাত্র কলেজ মাঠের এক জায়গায় বসে গ্রুপ স্টাডি করার সময় খাগড়াছড়ি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুম রানা ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫ জনের অধিক সেটলার যুবক গিয়ে কোন কারণ ছাড়াই তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় সেটলাররা তিনজন সাধারণ পাহাড়ি ছাত্রকে মারধর করে।
এর আগেও বেশ কয়েকবার এভাবে পাহাড়ি ছাত্রদের উপর হামলা-মারধর ও হুমকি প্রদান করেছিল সেটলাররা। এর মধ্যে দু’য়েকটি ঘটনা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হলো।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে লিফলেট বিতরণ করতে গেলে জেএসএস(এমএন লারমা) সমর্থিত ছাত্রদের উপর সেটলাররা হামলা চালায়। এতে দু’জন আহত হয়।
২৭ মার্চ ২০১৭ সকালে সেটলাররা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে সোনাক্কো চাকমা ও সুখময় চাকমা নামে কলেজের একাদশ শ্রেণীর দুই পাহাড়ি ছাত্রকে মারধর করে।
এর আগে ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই কলেজে ক্লাশ চলাকালীন কতিপয় বহিরাগত সেটলার (তারা নিজেদের বাঙালি ছাত্র পরিষদের কর্মী পরিচয় দেয়) ক্লাশরুমে ঢুকে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে বলে যে, কলেজ ক্যাম্পাসে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীরা আর বসে আড্ডা দিতে পারবে না। এটা করলে তারা যদি হামলা চালায় তাহলে কেউ দায়ী থাকবে না।
এছাড়াও সেটলারদের দ্বারা বিভিন্ন সময় পাহাড়ি ছাত্রদের হুমকি ও ছাত্রীদের ইভটিজিং এর মতো ঘটনাও ঘটেছে। সেটলারদের পিছনে সেনা-প্রশাসনের মদদ থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উপরন্তু পাহাড়ি ছাত্রদের সাথে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, গতকাল হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আজ রবিবার কলেজ অধ্যক্ষের নিকট কিছু দাবিনামা পেশ করেছে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এতে তারা কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ২৭ জানুয়ারি হামলার সাথে জড়িত মাসুম রানা, আশরাফুলসহ জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও কলেজ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।