গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ১৭ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি
৮ দফা রাজনৈতিক প্রস্তাব ও দাবিনামা গৃহীত
রাঙামাটি : পার্বত্য চট্টগ্রামের যুব সমাজের অগ্রণী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৫ম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল রাঙামাটির কুদুকছড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। ০৫ ও ০৬ এপ্রিল দুইদিন ধরে চলা উক্ত কাউন্সিল অধিবেশনে অংগ্য মারমাকে সভাপতি, জিকো ত্রিপুরাকে সম্পাদক ও থুইক্যচিং মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৭ সদস্যের শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপস্থিত ্প্রতিনিধিগণ মুহুর্মুহু করতালি ও স্লোগানের মাধ্যমে নতুন কমিটিকে স্বাগত জানান।
নতুন কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান বিদায়ী কমিটির সভাপতি মাইকেল চাকমা। এর পর তিনি নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে সংগঠনের ফাইলপত্র তুলে দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
পঞ্চম সম্মেলনে প্রতিপাদ্য স্লোগান ছিল “দাসত্বের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়” -‘শ্রমবিমূখ, পলায়নবাদী, অর্পিত দায়িত্ব পালনে অক্ষম, ব্যক্তি স্বার্থান্নেষী, সুযোগ সন্ধানী, দোদুল্যমান, নীতিহীন, সুবিধাবাদী, দুর্নীতিপরায়ন, আপোষকামী দালাল ও প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্রসম্পন্ন কর্মীদের মুখোশ উম্মোচন করে দিন। বিপ্লবী বুলি আউড়িয়ে তারা যে স্তরে কিংবা যে পদে অধিষ্ঠিত থাকুক দৃঢ়তার সাথে তাদের এই ঝোঁকগুলি বিরোধীতা ও সমালোচনা করে সংগঠনকে অধিকতর সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করুন’।
কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত দেড়শতাধিক প্রতিনিধির সর্বসস্মতির ভিত্তিতে ৮ দফা রাজনৈতিক প্রস্তাবনা ও দাবিনামা গৃহীত হয়। উক্ত ৮ দফা প্রস্তাবনায় সম্প্রতি গত ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশ ও এস আলম গুন্ডাবাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে ৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা ও হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। রাজনৈতিক প্রস্তাবনায় বলা হয়, ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার প্রতিবাদে আজ ০৭ এপ্রিল সকালে ঢাকায় সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য ও প্রগতিশীল ছাত্রজোট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় ঘেরাও কর্মসূচির সাথে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম একাত্মতা ঘোষণা করছে।
রাজনৈতিক প্রস্তাবনায় ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের সমালোচনা করা হয়, এবং তা বাতিলের দাবী জানানো হয়। রাজনৈতিক প্রস্তাবনায় গত ২২ জানুয়ারী ২০১৫, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত জারিকৃত ১১ দফা অগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমূলক নির্দেশনার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানানো হয় এবং উক্ত ১১ দফা নির্দেশনা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানানো হয়।
সম্মেলন থেকে জুম্ম জনগণের মৌলিক দাবি আদায়ের জন্য বৃহত্তর জুম্ম জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বলা হয়, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে ২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা কর্তৃক ঢাকা থেকে ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে বলে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম মনে করে।
সম্মেলন থেকে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় স্পেশ্যাল ইকোনোমিক জোন স্থাপনের নামে চা শ্রমিকদের বংশ পরম্পরায় ভোগদখল করে আসা ৫১১ একর ধান্যজমি অধিগ্রহণ করার চক্রান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সম্মেলন থেকে আরো বলা হয়, যুব ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দিনাজপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়া উপজেলায় সংখ্যালঘু জাতিসত্তা জনগণের ওপর নির্যাতন ও ভূমি বেদখলের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
গত বছর ২৯ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে ফিলিস্তিনি সংহতি দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ৮গণসংগঠনের মিছিলে সেনা-পুলিশের হামলা ও মিছিল থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা ও খাগড়াছড়ি জেলা দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমাকে গ্রেফতার ও জেলে প্রেরণের ঘটনা ন্যাক্কারজনক আখ্যায়িত করে সম্মেলন থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদসহ সকল নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়।
কাউন্সিল অধিবেশন ও আলোচনা সভায় সংগঠনের বিদায়ী সভাপতি মাইকেল চাকমা সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা সভায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা প্রতিনিধিগণের উদ্দেশ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই সংগ্রামকে জোরদার করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আদর্শিক ও নৈতিকভাবে সুসংগঠিত ছাত্র-যুবকগণই অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অন্যতম শক্তি।
কাউন্সিল অধিবেশনে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)এর কেন্দ্রীয় সদস্য ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাবেক সভাপতি নতুন কুমার চাকমা, ইউপিডিএফ রাঙামাটি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাবেক সহসভাপতি শান্তিদেব চাকমা, ইউপিডিএফ সংগঠক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঠুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রিনা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমা। এছাড়া কাউন্সিলে অর্থ সম্পাদকের প্রতিবেদনও উপস্থাপন করা হয়। পরে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সর্বসম্মতির ভিত্তিতে রিপোর্টসমূহ অনুমোদন করা হয়।
কাউন্সিল অধিবেশনে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দেড়শতাধিক প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
—————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।