
।। মন্তব্য প্রতিবেদন ।।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, খুন ও অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলামকে সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে বদলী করা হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় আশরাফকে মহালছড়িতে ৬ এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) এর পরিচালক হিসেবে বদলীর নির্দেশ দেয়।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী একই সাথে হতবাক, ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ঠ। কারণ এই আশরাফুল ইসলাম হলেন সেই পুলিশ কর্মকর্তা যিনি গত বছর ৬ নভেম্বর সাঁওতালদের বাড়িঘরে হামলা, খুন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন এবং যিনি উক্ত ঘটনার তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এ কারণে মহামান্য হাইকোর্ট তাকে গাইবান্ধা থেকে প্রত্যাহার করতে সরকারকে আদেশ দেন। সরকার উক্ত আদেশের ১৫ দিন পর তাকে খাগড়াছড়িতে বদলী করে।
গোবিন্ধগঞ্জে সাঁওতালদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার সাথে পুলিশ যে জড়িত তা এখন এক প্রমাণিত সত্য। ঘটনার পর প্রথমদিকে পুলিশ ঘটনার সাথে তাদের সংস্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করলেও কাতার-ভিত্তিক টিভি চ্যানেল আলজাজিরা পুলিশ সদস্য কর্তৃক ঘরে আগুন দেয়ার দৃশ্য প্রচার করলে পুলিশের নির্দেষ দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। অথচ তারপরও এসপি আশরাফ হামলাকারী অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করতে এবং অগ্নিসংযোগকারী তিন পুলিশ সদস্যের নাম ও পরিচয় জানাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। মোট কথা তিনি ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য, তাদেরকে আইনের আওতা থেকে রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আইন ও আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল এবং সংখ্যালঘু জাতির প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার তাকে অন্য একটি সংখ্যালঘু জাতি-অধ্যুষিত এলাকায় বদলী করে কী বার্তা দিতে চেয়েছে? এই বদলী কি তার জন্য পুরস্কার নয়? তাকে খাগড়াছড়ি বদলীর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকারের পাহাড়ি-বিরোধী নীতিই নগ্নভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

বস্তুত: অবাধ্য, বেপরোয়া ও চরম দুর্নীতিবাজ সরকারী ও সেনা কর্মকর্তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলী করার রেওয়াজ দীর্ঘ দিনের। আশরাফকে মহালছড়িতে বদলী করে এই বহুল-প্রচলিত ও অনুসৃত রেওয়াজকেই অনুসরণ করা হয়েছে। সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত নীতি কিছুতেই সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে উঠে আসতে পারছে না, আশরাফের বদলী এই সত্যতার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলাসহ বিভিন্ন ঘটন-অঘটনের জন্য এসপি আশরাফদের মতো সংখ্যালঘু জাতি-বিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতাসম্পন্ন সরকারী-সেনা কর্মকর্তাদের বিপুল সংখ্যায় উপস্থিতি যে অন্যতম প্রধান কারণ তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। গোবিন্দগঞ্জের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্য কর্তৃক সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ভিডিও চিত্র প্রচারিত হওয়ায় হামলায় পুলিশ সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে, অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় সে ধরনের দৃশ্য ধারণ করে প্রচার করা সম্ভব হয়নি বলে বহু সাম্প্রদায়িক হামলা ও ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যাচার করতে ও নিজেদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করতে সেনাবাহিনীর পক্ষে এখনও সম্ভব হচ্ছে। তবে নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ট তদন্ত হলে অবশ্যই বহু সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য দোষী প্রমাণিত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
শেষ কথা হলো পার্বত্যবাসী চাই অবিলম্বে এসপি আশরাফুলকে খাগড়াছড়িতে বদলীর সরকারী সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক এবং গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে হামলার জন্য তার বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তার মতো সংখ্যালঘু জাতি বিদ্বেষী ও উগ্রসাম্প্রদায়িক পুলিশ কর্মকর্তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে dump করার সিদ্ধান্ত পার্বত্যবাসীকে অবমাননা করার সামিল এবং এটা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না।#
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।