গুইমারা ব্রিগেড কমান্ডারের বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া
গুইমারা প্রতিনিধি॥ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও আর্মিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে না, সেটলাররাও থাকবে। গুইমারা ব্রিগেড কমান্ডারের এই বক্তব্যে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মে সোমবার গুইমারা সেনা ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল জামান গুইমারা-রামগড়-মানিকছড়ি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের সাথে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।
জানা যায়, ঐ দিন তিনি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মিটিঙে উপস্থিত থাকতে বললে তারা অনিচ্ছা সত্বেও ভয়ে উক্ত মিটিঙে যোগ দিতে বাধ্য হন। অনেককে জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে কমান্ডারের মিটিঙে যোগ দিতে হয়। এজন্য তাদের অনেকের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে বলে জানা গেছে।
মিটিঙে উপস্থিত কয়েকজনের সাথে আলাপে জানা যায়, উক্ত সভায় নানা কথা বলার পরে গুইমারা ব্রিগেড কমান্ডার উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিগণকে এক পর্যায়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আর্মিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যাবে এমন ঘোষণা দিলেও আর্মিরা কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে ছেড়ে চলে যাবে না। এসময় তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতিস্থাপনকারী বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামেই থাকবে। তিনি এসময় পাহাড়ি বাঙালি মিলেমিশে থাকার পরামর্শ দেন।
তার এ বক্তব্য নিয়ে সিএইচটি নিউজ ডটকমের কাছে অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করেছেন।
গুইমারার এক শিক্ষক প্রশ্ন করে বলেন, ‘গুইমারা ব্রিগেড কমান্ডার কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাইতেও বড়, পাওয়ারফুল?’
এক গ্রামের মারমা কার্বারীর মন্তব্য: ‘শেখ হাসিনা হলেন বাংলাদেশ-মাইনাস পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধানমন্ত্রী। আর গুইমারা ব্রিগেড কমান্ডার হলেন গুইমারা-মানিকছড়ি এলাকার প্রেসিডেন্ট প্লাস প্রধানমন্ত্রী। এদের মধ্যে কে বড় বুঝা মুশকিল।’
মানিকছড়ির এক সরকারী চাকুরিজীবী বলেন, তার এই বক্তব্য সব আর্মির বক্তব্য বলে আমরা ধরে নিতে পারি না। আর্মিরা বহু বছর ধরে এখানে আছে, তাই তাদের মধ্যে খুব সম্ভবত একটা নস্টালজিয়া কাজ করে। সেজন্য যখন এখান থেকে চলে যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠে তখন তাদের মন খারাপ হয়। আর কারোর মন খারাপ হলে তারা নানা কথা বলে থাকে।
এক হাই স্কুলের শিক্ষক মনে করেন আর্মিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকবে, তবে ক্যান্টনমেন্টে। চুক্তিতেও সেভাবে লেখা আছে। তিনি বলেন, গুইমারা ব্রিগেড কমান্ডারের উচিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ভালোভাবে পড়া।
সেটলারদের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা এমনিতেই অনেকে চলে যাচ্ছে। কারণ সমতল জেলায় তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ঘরবাড়ি আত্মীয় স্বজন রয়েছে। এখানে থাকলে কিছু রেশন পায় বলে অনেকে এখনো আছে।
খাগড়াছড়ির এক ব্যবসায়ী বলেন, আর্মিরা এখানে (পার্বত্য চট্টগ্রামে) কেন থাকতে চায় জানেন? আর্মিরা এক বিদেশে শান্তি রক্ষা মিশনে যেতে চায়, না হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকতে চায়। কারণ এই দুই জায়গায় তাদের লাভ। তারা শান্তি রক্ষা মিশনে গেলে বা এখানে থাকলে দেদার টাকা কামায় করতে পারে। এজন্য তারা এখান থেকে যেতে চায় না। দীর্ঘ দিন থাকার কারণে এখানে তাদের অনেকের কায়েমী স্বার্থ সৃষ্টি হয়েছে।
এখানে আর্মিরা কিভাবে টাকা কামায় করে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আর্মিরা সরকারের কাছ থেকে বিশাল বাজেট পায়, এটা কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির নামে, অপারেশন উত্তরণের নামে। এই টাকার হিসাব তাদের দিতে হয় না। তাছাড়া তারা অনেক জায়গায় গাছ ব্যবসায়ীদের কাছ চাঁদা নেয়। গুচ্ছগ্রামের বাঙালিদের রেশন থেকেও অনেকে পায়। আরো নানাভাবে তারা টাকা কামায় করে।
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।