ঘর পুড়ে যাবার পরে লুঙুদু ক্ষতিগ্রস্তদের একটি দিন কাটলো যেভাবে

0
7

নিজস্ব প্রতিনিধি।। রাঙামাটির লুঙুদু উপজেলার পরিস্থিতি এখনো থমথমে অবস্থায় রয়েছে। ঘর পুড়ে যাওয়া পাহাড়ি জনগণের অনেকেই এখনো তাদের পুড়ে যাওয়া ঘরে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। তবে কেউ কেউ ঘরে ফিরলেও তাদের মনে বিরাজ করছে আতংক ও ক্ষোভ।

18882128_845892612216131_4034012817871836217_nনাম প্রকাশ না করার শর্তে লুঙুদু তিনটিলা এলাকা নিবাসী এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ঘটনার আগের দিন লুঙুদুতে সেটলার বাঙালিদের হাবভাব দেখে তাদের মনে হয়েছে কিছু একটা ঘটে যাচ্ছে। তাই তাদের পরিবার সেদিন রাতেই অন্য জায়গায় নিরাপদে রাত কাটাতে যান। পরে সকালের দিকে তারা জানতে পারেন তাদের বাড়ি ও গ্রামের অন্য সকলের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের স্বপ্নেও আশা ছিলো না যে সেনা ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মাঝখানে সেটলাররা আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলে দেবে। আমরা চিন্তা করেছিলাম বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি হামলা, অত্যাচারের ঘটনা ঘটবে। কিন্তু তারা আমাদের ঘর পুড়িয়ে দিয়ে আমাদের একেবারে সর্বস্বহীন করে দিলো। এক কাপড়ে তারা ঘর ছেড়েছিলেন বলে তিনি জানান। গতকাল সারারাত তারা ভুইওছড়াসহ আশে-পাশের গ্রামে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত আরো কয়েক পরিবার তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছে বলে তিনি জানান।18814343_845892618882797_2440653715651066947_n

আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত জানান, সকালে হামলা করার আগেই তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, সেটলাররা লাশটি গ্রামে আনলে সেটলাররা উত্তেজিত অবস্থায় কোনো পাহাড়িকে দেখলে আক্রমণ করতে পারে। তাই তারা কিছুটা সরে দূরে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিয়েছিলেন। যেহেতু কেনো কিছু হবে না বা ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হবে না, তাই তারা এককাপড়েই ঘর ছেড়েছেন।

তিনি আরো জানান, তাদের গ্রামের সবাই নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দূর প্রত্যন্ত গ্রামে ও বনেবাদাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের অনেকে রাতটি খুব কষ্টে কাটিয়েছেন বলে তিনি জানান। তিনি জানান,তাদের কেউ রাতটি বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে আশ্রয় নিয়েছেন।

রাঙামাটির একদল সাংবাদিক আজ সকালে লুঙুদু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে গেলে সেখানে বুদ্ধদেব কুমার চাকমা নামে ক্ষতিগ্রস্ত একজন পাহাড়ি তার পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে সাক্ষাতকারে বলেন, ক্ষতিপূরণদিয়ে বাঁচিয়ে না রেখে আমাদের গুলি করে মেরে ফেলান।

18893208_1943672792532967_2787057230119406493_nএদিকে লুঙুদু এলাকা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত একজন এই প্রতিবেদককে ফোনে জানান, তারা তিনটিলা গ্রামে তাদের ঘরে যেতে চাইলে মানিকজুরছড়া এলাকায় সেনাবাহিনী ও বিডিআর তাদের আটকিয়ে রেখেছে। ধারণা করা যাচ্ছে, সাংবাদিকদের মুখোমুখি যাতে হতে না হয় তার জন্য তাদের আপাতত গ্রামে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

তিনি জানান, তিনি ও তাদের গ্রামের অন্যান্যরা এখনো তাদের পুড়ে যাওয়া বাড়িতে যেতে পারেননি। গিয়ে বুঝতে পারবেন তারা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে তিনি জানান, তাদের সব সহায় সম্পত্তি শেষ হয়ে গেছে। তারা কিছুদিন আগে তাদের চাষের জমি থেকে ধান সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। নিশ্চিতভাবেই সেগুলো সম্ভবত পুড়ে গেছে বা লুটপাট হয়েছে। তবু তাদের প্রাণ যে বেঁচে গেছে তাতেই তারা আপাতত ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ বলে জানিয়েছেন।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.