কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে

চট্টগ্রামে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও নারী সংঘের বিক্ষোভ

0

HWF protest rally in chittagong1

চট্টগ্রাম : পাহাড়ি নেত্রী কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এবং তদন্তের নামে প্রহসন ও কালক্ষেপনের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।

আজ শুক্রবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা ও সভা সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রিনা চাকমা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, অপহৃত কল্পনা চাকমার বড় ভাই কলিন্দী কুমার চাকমা। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের নগর সাধারণ সম্পাদক আসমা আক্তার, নারী সংহতি নগর সভাপতি ইকরামুন্নেছা(চম্পা), গণসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রাম সমন্বয়ক হাসান মারুফ (রুমী), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংগঠক সামিউল আলম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন’র নগর সভাপতি লোকেন দে। এছাড়া সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা, প্রতিরোধ সংস্কৃতিক স্কোয়ার্ড’র সভাপতি জ্ঞান কীর্তি চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিল চাকমা, আদিবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের সভাপতি রনেল চাকমা।

সমাবেশ সোনালী চাকমা অভিযোগ করে বলেন, ১৯৯৬ সনে দিবাগত রাতে কল্পনাকে নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সেনা কর্মকর্তা লে. ফেরদৌস ও তার সহযোগী সালেহ আহম্মেদ, নুরুল হক গং’রা। অপহরণের ২০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও রাষ্ট্রযন্ত্র কোন খোঁজ দিতে পারে নি। উল্টো তদন্তের নামে কালক্ষেপন করে চিহ্নিত অপহরণকারীদোর রক্ষার জন্য সরকার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চ্টগ্রামের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তনু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ইউপিডিএফ’র নেতৃত্বে পাহাড়েও হরতাল- অবরোধ পালিত হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র কল্পনার ঘটনার মতো তনু হত্যার ঘটনাও আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কল্পনা অপহরণকারীদের যদি যথোপযুক্ত শাস্তি হতো তাহলে ক্যান্টনমেন্টএর মতো সুরক্ষিত স্থানে তনু হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতো না বলে তিনি মনে করেন।

অপহৃত কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘‘এই পর্যন্ত ২০ বছরে অনেক তদন্ত কমিটি হওয়ার পরও কোন তদন্ত কমিটি আমার ছোট বোন কল্পনা  চাকমার হদিসের ব্যাপারে সঠিক তথ্য জনসম্মুখে উপস্থাপন করতে পারেনি, যা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জ্বাজনক’’। তিনি অবিলম্বে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ও তার গংদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানান।

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, শাসকশ্রেণী পাহাড়িদের ধ্বংসের জন্য প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে চলেছে। পাহাড়িদের ভূমি অধিকার স্বীকৃতি না দিয়ে উন্নয়নের নাম করে পর্যটন কেন্দ্র, মেডিকেল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে তাদের বসতভিটা কেড়ে নিচ্ছে। পাহাড়ের ন্যায় সমতলের সাধারণ জনগণও নিরাপদ নয় উল্লেখ করে বক্তারা আরো বলেন, প্রায় দেশের কোথাও না কোথাও নির্বিচারে মানুষ খুন হচ্ছে। সরকারের ব্যর্থতার কারণে এই সব খুনের সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

সমাবেশ থেকে বক্তারা তদন্তের নামে কালক্ষেপন না করে, অবিলম্বে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস, সালে আহম্মেদ ও নুরুল  গং’দের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করে অপহরণ পরবর্তী সঠিক ঘটনা জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য সরকারে কাছে জোর দাবি জানান এবং একই সাথে তনুসহ  পাহাড় ও সমতলে সকল নারী ধর্ষণ ও ধর্ষণের পরবর্তী হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

সমাবেশ শেষে চেরাগী পাহাড় মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নন্দনকানন হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
——————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More