চবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২৩ জুন ২০২৩

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের আয়োজিত ফুটল টুর্নামেন্ট-২০২৩ সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ জুন ২০২৩) বিকাল ৪টায় চবি’র কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে ২০১৭-১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের টিম ইনক্রেডিবল বনাম ২০১৮-১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের টিম তাজিংডং। ফাইনালে তাজিংডং টিম ১ গোলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

খেলা শেষে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক রনজেন চাকমার সভাপতিত্বে এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রোনাল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব সুদর্শন চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারন সম্পাদক চিংমং মারমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি স্নেহময় ত্রিপুরা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা প্রমুখ। এছাড়াও ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন প্রগতিশীল ও সামাজিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে সুদর্শন চাকমা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এই সংগঠন জুম্ম শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আমরা এর বাইরেও পাহাড়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কাজ করে যাচ্ছি। চবি জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং প্রোগ্রাম, ভর্তি পরীক্ষা সময়ে ভর্তি সহায়ক কমিটি, ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ফুটবল ও ক্রিকেট এবং দাবা টুর্নামেন্ট এবং বৈ-সা-বি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উৎসব আয়োজন করে থাকে । এসব টুর্নামেন্ট আয়োজনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ক্যাম্পাসে অধ্যয়নরত জুম্ম শিক্ষার্থীদের ভাতৃত্ব বন্ধন জোরদার করা। একজন ব্যক্তির বিকাশ শুধু গতানুগতিক পড়াশোনার মধ্যে হয় না,পড়াশোনার পাশাপাশি তাকে খেলাধুলা করতে হয়। প্লেটো তার শিক্ষাতত্ত্বে খেলাধুলাকে অন্তর্ভুক্ত করেন। কারণ, খেলাধুলা মানুষের মানসিক ও দৈহিক বিকাশে সহায়তা করে।

অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এখানে না আসলে মিস্ করতাম। খুবই সুন্দর একটি উপভোগ্য খেলা হয়েছে। একেবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, যার জন্য রেফারিকে ধন্যবাদ দিতে হয়। ১৮-১৯ ব্যাচ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এবং ইনক্রেডিবল টিম ও ভালো খেলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলা অবশ্যই নিয়মিত হওয়া উচিত। একটা ভ্রাতৃত্ববোধ, মৈত্রীময় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করার জন্য এই খেলাধুলার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটা এমন যে একটা কসমোপলিটান কালচারের ভিতরে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং সম্পর্কের আদান প্রদান ও পরিচিতি তৈরি হবে। ইন্টারএকশন হলে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ সম্পর্ক তৈরি হয়। আবারও সামনে বছর আমরা এমন খেলা দেখব এই আশাবাদ রাখি। এই ধরনের আয়োজনে আসার চেষ্টা থাকবে।

পিসিপি সভাপতি অঙ্কন চাকমা বলেন, ক্যাম্পাসে যে জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারকে আমরা রেখে গিয়েছি সেটাকে এখনো আমরা নিজেদের পরিবার মনে করি। আজকে দুর্দান্ত খেলায় আপনারা যে দ্যুতি ছড়িয়েছেন এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের দ্যুতি আরো দূরে। আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে। ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র কুমার সমিত রায় মনট্রিল অলিম্পিকে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন যা ইতিহাস বিভাগের গর্ব এবং বর্তমান শিক্ষার্থী প্রেন চ্যুং ম্রো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের হয়ে সুনাম বয়ে আনছেন।
তিনি বলেন, পাহাড়িরা অনেক পরিশ্রমী তা রুপনা চাকমারা দেখিয়ে দিয়েছে এবং দেশের জন্য অনেক সুনাম নিয়ে এসেছে। পাহাড়িরা সুযোগ পেলে অনেক কিছু করার সক্ষমতা রাখে। আপনাদের আরো মনে করিয়ে দিতে চাই এই ক্যাম্পাস থেকে নব্বই দশকে হিল লিটারেচার ফোরামের স্যাটেলাইট, রাডার পত্রিকা প্রকাশ হয়েছিল, কল্পনা চাকমার সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন এখান থেকে শুরু হয়েছিল। এই গৌরবজ্জোল ইতিহাস আমাদেরকে ধরে রাখতে হবে। ফুটবল টুর্নামেন্ট এটাই শিক্ষা দেয় যে ঐক্যবদ্ধ থেকে নিরন্তর পরিশ্রম করতে হয় এবং সুশৃঙ্খলার সাথে নিয়মমাফিক যে খেলা হয়েছে সেটা পারিবারিক-সামাজিক সব জায়গায় যেন ছড়িয়ে থাকে।

অংকন চাকমা আরো বলেন, আজকে খুব কষ্টের সাথে বলতে হচ্ছে, বান্দরবানে ছোট জনগোষ্ঠী ম্রো, খুমী ও বম জনগোষ্ঠীর ২৭৬টির অধিক পরিবার ভারতে শরণার্থী হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও আমাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে শরণার্থী হতে হচ্ছে। নিজেদের শিকড়ের জায়গা মনে রাখতে হবে, লালন করতে হবে। আজকে খেলায় যে চমৎকার দ্যুতি দেখিয়েছেন সেটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক রনজেন চাকমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অনুষ্ঠানে আগত শিক্ষক, বিভিন্ন প্রগতিশীল ও সামাজিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, দর্শক এবং ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রেফারিবৃন্দকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত জুম্ম শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববন্ধন সুদৃঢ় করতে এই ধরনের আয়োজন আগামীতেও থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন