সুই অং, বান্দরবান ।। চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আজ রবিবার (২২ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করেছেন বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি ‘লীজকৃত নাইতং পাহাড়ে বর্তমানেও কোন ম্রো জনবসতি নেই এবং পূর্বেও ছিল না’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু, অপরদিকে তিনি বলেছেন, “সম্প্রতি যে জমিতে পর্যটন হোটেল নির্মাণের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পক্ষ যে বাদ প্রতিবাদ জানিয়ে চলছে, তর্কিত জমিটি (নাইতং পাহাড়) লামা উপজেলাধীন ৩০২ নং লুলাইন মৌজায় অবস্থিত। উক্ত জমিতে পরিষদের তত্ত্বাবধানে কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে স্থানীয় ম্রো নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ২০ (বিশ) একর ৩য় শ্রেণীর ভূমি পরিষদের নামে বন্দোবস্তি নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়।”
এতেই তার ‘নাইতং পাহাড় কোন ম্রো জনবসতি নেই’ কথাটি খারিজ হয়ে যায়। কারণ সেখানে যদি কোন ম্রো জনবসতি না-ই থাকে তাহলে জেলা পরিষদের নামে ২০ (বিশ) একর ৩য় শ্রেণীর ভূমি বন্দোবস্তি নেওয়ার জন্য স্থানীয় ম্রো নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হলো কেন?
তিনি সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তি ও ভূমি লিজ দেয়া বিষয়ে বলেছেন, ‘পরবর্তীতে ২৮/০৮/ ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় পর্যটন উন্নয়ন কার্যক্রমটি পরিষদে ন্যস্ত হলে পরিষদের নিজস্ব উদ্যোগে উক্ত নাইতং পাহাড়ে হর্টিকালচারের পাশাপাশি পর্যটন সেবা উন্নয়নের জন্য রাস্তা নির্মাণ ও ছোট ছোট উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের প্রস্তাব এবং অনুরোধের ভিত্তিতে ১৮টি শর্তাবলী প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা রেখে ১ জানুয়ারি ২০১৬ হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০৫৫ সাল পর্যন্ত ৪০ বছরের জন্য ভূমিটি সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তি করে তাদের অনুকূলে লীজ দেওয়া হয়’।
তবে সংবাদ সম্মেলনে মাত্র ৬টি শর্তের কথা প্রকাশ করা হয়েছে। বাকী শর্তগুলো কেন প্রকাশ করা হয়নি তা নিয়ে রহস্য থেকে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি উক্ত জমিটি জেলা পরিষদের নামে এখনো বন্দোবস্তি হয়নি বলেও জানিয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, যে জমিটি এখনো জেলা পরিষদের নামে বন্দোবস্তি হয়নি সে জমি পরিষদ কীভাবে সেনাবাহিনীর কাছে ৪০ বছরের জন্য লিজ দিতে পারে? এটা কী আইনের পরিপন্থি নয়?
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা হোটেল-পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন ‘সম্পাদিত চুক্তির শর্তাদি প্রতিপালনের মাধ্যমে পরিষদের ২০ একর জমিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্থানীয় অধিবাসীদের জীবন-যাপন ক্ষুন্ন না করে পর্যটন সেবা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে’।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের এই মত কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ সেখানে পাঁচতারকা হোটেলসহ বিনোদন পার্ক নির্মাণ করা হলে নিশ্চিভাবেই ম্রোরা উচ্ছেদ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনী নাইতং পাহাড়ের ভূমি রক্ষায় আন্দোলন করার কারণে ম্রোদেরকে হুমকি-ধমকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ নানা নিপীড়নমূলক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় ম্রোরা এখন ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যেই ম্রোদের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রেও নানাভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং বিস্তর এলাকায় খুঁটি গেড়ে ম্রোদের ভূমি দখল ও তাদেরকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
এ অবস্থায় বান্দরবান জেলা পরিষদের উচিত নাইতং পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেলসহ পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ ও ভূমি লিজ চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করা এবং ম্রোদের নিজ ভূমিতে বসবাসের নিশ্চিয়তা বিধান করা।
***
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।