জাতির বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : মনিষ বাবু

0

খাগড়াছড়ি॥ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে। মতপার্থক্য কোন দেশে নেই? তবে জাতির বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্যালেস্টাইনে হামাস ও ফাত্তাহ সাংগঠনিক ও সামরিকভাবে একসাথে কাজ করছে। তাদের মধ্যে বিভেদ থাকলেও তারা ফিলিস্তিনী জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য যৌথভাবে সংগ্রাম করছে।

গতকাল শুক্রবার খাগড়াছড়ির মহাজনপাড়াস্থ সূর্যশিখা ক্লাবে এলাকার মুরুব্বীদের সাথে সংস্কারপন্থী জেএসএস নেতাদের আয়োজিত এক মত বিনিময় সভায় রবি শংকর তালুকদার (মনিষ বাবু) উপরোক্ত মন্তব্য করেন এবং সংস্কারবাদীদেরকে জুম্ম জনগণের জন্য আন্দোলনরত অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন ‘বিএনপি জোট সরকারের আমলে মহাজনপাড়ায় সাম্পপ্রদায়িক হামলা হয়েছে। বর্তমানেও সাম্প্রদায়িক হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র চলছে।’ এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

উক্ত মত বিনিময় সভায় সংস্কারবাদী দলের ডিকু বাবু, সোহাগ বাবু ও হিরন্যা বাপসহ আরো ৪-৫ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রামের মুরুব্বীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মনিষ বাবু ও শক্তিপদ চাকমাসহ ২০ জন।

সংস্কারবাদী নেতারা উক্ত মত বিনিময় সভায় আন্দোলন ও জনগণের অধিকারের ব্যাপারে একটি কথাও উচ্চারণ না করলেও ইউপিডিএফ ও জেএসএস (সন্তু লারমা) এর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। এতে উপস্থিত মহাজন পাড়ার মুরুব্বীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

উক্ত সভায় উপস্থিত এক মুরুব্বী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ডিকু বাবু শক্তিমান চাকমা হত্যার কথা বলেছেন, কিন্তু মিঠুন চাকমা ও সূর্য বিকাশ চাকমা হত্যার প্রসঙ্গ তুললেন না।

সংস্কারবাদীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হলে তিনি বলেন, ‘তাদেরকে তো আমরা কখনো আন্দোলন করতে দেখি না। জনগণের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে মিটিং মিছিল করতে দেখি না। তারা কেবল নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। যেমন গতকাল ইউপিডিএফ জুম্মদের উপর বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ও পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে সমাবেশ করেছে। অথচ সংস্কারবাদীরা করেছে ইউপিডিএফ-কে গালাগালি। এতে তো সরকারই লাভবান হচ্ছে। জনগণের শত্রুরা লাভবান হচ্ছে। সংস্কারবাদীরা তাদের হাতে যে শক্তি আছে তা যদি আন্দোলনের কাজে লাগাতো তাহলে আজকে আন্দোলন অনেক দূর এগিয়ে যেতো। কিন্তু তারা তাদের সংগঠন ও টাকা পয়সা আন্দোলনের কাজে লাগায় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘সংস্কারবাদীরা এক সময় বলতো আন্দোলন করতে টাকা লাগে। এখন তো তাদের অনেক টাকা। কিন্তু কই টাকা থাকার পরও তো তারা আন্দোলন করছে না। অস্ত্র কিনতে তাদের টাকা থাকে, নির্বাচন করতে তাদের টাকা থাকে, ব্যবসা করতে টাকা থাকে, পর্যটন হোটেল বানাতে টাকা থাকে, কিন্তু জনগণের অধিকারের জন্য মিটিং মিছিল ও সমাবেশ করতে তাদের টাকা থাকে না কেন?’

‘ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তারা আমাদের সাথে মত বিনিময় সভার আয়োজন করে, কিন্তু জনগণের অধিকার ও আন্দোলনের কথা বলতে তো তাদেরকে কখনো এ ধরনের মত বিনিময় সভা করতে দেখা যায়নি। সেটলাররা জায়গা জমি কেড়ে নিলে, কোন জুম্ম নারী ধর্ষণের শিকার হলে, এমনকি পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা হলেও তাদেরকে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে দেখা যায় না। এমনকি এসবের প্রতিবাদে তারা দুই লাইনের একটা বিবৃতি পর্যন্ত দেয় না। অথচ নিজের জ্ঞাতি ভাই ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে তারা সব সময় সোচ্চার। তাদের যত বিবৃতি ও মিটিং মিছিল হলো ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে। যেন তাদের আন্দোলন হলো ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে।’

তিনি বলেন আন্দোলন দূরের কথা, সংস্কারবাদীরা বরং আন্দোলনের বিরুদ্ধে কাজ করছে, আন্দোলনের ব্যাপারে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং জনগণের মধ্যে পরাজয়বাদী মনোভাবের বিস্তার ঘটাচ্ছে। ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে তারা নিজেরা কোন ধরনের আন্দোলন করে না, অন্যরা করলেও তাতে বাধা সৃষ্টি করে। প্রতিরোধ দূরের কথা, কোন কোন জায়গায় তারা বহিরাগতদের কাছে পাহাড়িদের জমি তুলে দিচ্ছে। আসলে সংস্কারবাদীরা আন্দোলনে এক বড় বাধা। আর এজন্যই সেনাবাহিনী তাদেরকে সহযোগিতা করছে।

সংস্কারবাদীরা তাদের নীতি ও রাজনৈতিক লাইনের মৌলিক পরিবর্তন না করলে তারা কখনই জনসমর্থন পাবে না। সেনাবাহিনীর দালালি করে ও কেবল ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে কাজ করে তারা বেশীদূর যেতে পারবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
——————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More